Placeholder canvas
কলকাতা রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ |
K:T:V Clock

Panchayat Election | Darjeeling | দু’দশক পর পাহাড়ে পঞ্চায়েত ভোট, কোন দল কতটা এগিয়ে, জানুন

Updated : 9 Jun, 2023 5:33 PM
AE: Hasibul Molla
VO: Soumi Ghosh
Edit: Silpika Chatterjee

দার্জিলং: দু-দশক পর পাহাড়ে পঞ্চায়েত ভোট হতে চলেছে। তবে পাহাড়ে ত্রিস্তরীয় ভোট হচ্ছে না। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির মিলে দ্বিস্তরীয় ভোট হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। দার্জিলিং জেলার ৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে এবং কালিম্পং জেলায় রয়েছে ৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েত। পাশাপাশি দার্জিলিংয়ে ৫টি এবং কালিম্পংয়ে ৪টি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে। এই দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোটে দার্জিলিংয়ে ৫১৪টি এবং কালিম্পং-এ ২৬৩টি পোলিং স্টেশন থকবে। দার্জিলিংয়ে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৮৭ হাজার ৯৫২ এবং কালিম্পংয়ে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯৩২ জন ভোটার রয়েছে। 

জিএনএলএফ নেতা সুভাষ ঘিসিংয়ের আমলে ২০০০ সালে পাহাড়ে শেষবারের মতো দ্বিস্তরীও পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল। ২০০৫ সালের পর থেকে পাহাড়ে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নেই। যার ফলে গ্রামীণ উন্নয়নের সুযোগ থেকে পাহাড়বাসীরা দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিল। সুভাষ ঘিসিং ছিলেন দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। সেইসময় পঞ্চায়েত ভোটের ব্যবস্থা  পাহাড়ের চালু থাকলে হিল কাউন্সিলের ক্ষমতা কমতে পারে এই আশঙ্কায় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার পাহাড়ে ভোট করায়নি। ২০০৭ সালে ঘিসিংকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুং। তারপরই পাহাড়ে ধীরে ধীরে শুরু হয় গোর্খাল্যান্ডের নামে বিভিন্ন আন্দোলন। পাহাড়ের মানুষ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০১১সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য পরিষদকে সরিয়ে তৈরি হয় জিটিএ বা গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। ২০১১ সালে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের গঠনের চুক্তি সই হয়। এই চুক্তিতে পাহাড়ে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা লাগু করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনও জিটিএ আইন সংবিধান স্বীকৃত না হওয়ায় পাহাড়ে জিটিএ চুক্তি মেনে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট করার চেষ্টা হলে সেক্ষেত্রে নতুন করে আইনি জটিলতার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই জন্যেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন পাহাড়ে দ্বিস্তরীও  পঞ্চায়েত ভোটের সিদ্ধান্তই দিয়েছে। 

এদিকে এখন পাহাড়ের আন্দোলনের রূপরেখা অনেকটাই বদলেছে হিংসাত্মক আন্দোলনের পথ ছেড়ে পাহাড়ের নেতারা ধীরে ধীরে সুষ্ঠভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে পাহাড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে হেঁটেছে। এর জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে বিনয় তামাং, অনিত থাপা ও অজয় এডওয়ার্ডের মতো নেতারা। 

পাহাড়ে পঞ্চায়েত ভোটে কী হয়, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে জল্পনা। দার্জিলিং পুরসভা দখলে থাকা অনিত থাপার গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হবে অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বা বিমল গুরুংয়ের বর্তমানে অবস্থা কী, সেটা কিন্তু এই পঞ্চায়েত ভোটেই বোঝা যাবে। গুরুংয়ের দল থেকে ছেড়ে আসা বিনয় তামাং তৃণমূলে যোগ দিয়েও তৃণমুল ত্যাগ করেছেন। বিনয় তামাংয়ের বিশ্বাসযোগ্যতাও পাহাড়বাসীর কাছে তলানিতে ঠেকেছে। একই অবস্থা বিমল গুরুংয়েরও। গুরুং যেহেতু বারবার শিবির বদল করে একবার বিজেপি একবার তৃণমূল পরে আবার বিজেপির  হাত ধরায় গুরুংও পাহাড়বাসীর কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এই মুহুর্তে পাহাড়ের পঞ্চায়েত ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  তৃণমূলও  বসে নেই। তারাও ইতিমধ্যে পাহাড়ের মধ্যে অনেকটাই ঘড় গুছিয়েছে। পাহাড়ের ঘড় গোছাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বারবার পাহাড়ে ছুটে এসেছেন।  পাহাড়ে যতবার এসেছেন তিনি উন্নয়নের ডালি পাহাড়বাসীকে উৎসর্গ করেছেন। যে পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না সেই পাহাড়ে হিল ইউনিভার্সিটি স্থাপন করেছেন। এছাড়াও পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়নে তিনি কসুর করেননি। প্রায় প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনে পাহাড়ের দলগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোটে জেতা। বিজেপির অবস্থানও পাহাড়ে অনেকটাই বদলেছে। বিজেপিও পাহাড়বাসীর থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে বিজেপি এবার পাহাড়ের দ্বিস্তরীও পঞ্চায়েত ভোটে পাহাড়ের কিছু ছোট ছোট আঞ্চলিক দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়াই করার সম্ভাবনা আছে। তবে পাহাড়ে দু-দশক পর হতে চলা দ্বিস্তরীও পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে মুখিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দল।