
Coromandel Express Accident | কী ভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস? কারণ জানাল রেল মন্ত্রক
নয়াদিল্লি: গত কয়েক দশকের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনার (Rail Accident) সাক্ষী হয়েছিলেন দেশবাসী। ওড়িশার (Odisha) বাহানাগা বাজার (Bahanaga Bazar Station) স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তিনটি ট্রেন (Train)। দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু হয় ৩০০ জনের। সেই বিভীষিকাময় ঘটনার স্মৃতি এখনও মানুষের মনে টাটকা। ঘটনার পরই প্রশ্ন ওঠে রেলের সুরক্ষা নিয়ে। রেল মন্ত্রীর নির্দেশে সেই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছে। রিপোর্টে কী আছে, তা নিয়ে কোনও আধিকারিক মুখ খুলছেন না। তবে এই দুর্ঘটনার কারণ প্রথমবার প্রকাশ্যে আনল রেল মন্ত্রক (Rail Ministry)।
রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের তদন্ত রিপোর্ট উল্লেখ করে রেল মন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সিগন্যালের সমস্যার জেরেই সেই রাতে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল তিনটি ট্রেন। রাজ্যসভায় এই কারণ জানতে চেয়েছিলেন সাংসদ জন ব্রিট্টাস। সেই প্রশ্নের উত্তরেই রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, ভুল সিগন্যালের জন্যই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ইলেকট্রিক লিফটিং ব্যারিয়ার অর্থাৎ লেভেল ক্রসিংয়ে যে যন্ত্রের সাহায্যে গেট বন্ধ করা বা খোলা হয়, সেটি পরিবর্তন করা হয়েছিল। আর সেই পরিবর্তনের সময় সিগন্যালিং সার্কিটে সমস্যা হয়। স্টেশনের নর্থ সিগন্যাল গুমটিতে সিগন্যালিং সার্কিট সঠিকভাবে কাজ করেনি। ফলে যে লাইনে ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল, সেই লাইনে লালের বদলে সবুজ সঙ্কেত দেখানো হয়। স্বাভাবিক ভাবেই ওই লাইনে ঢুকে পড়ে যাত্রীবাহী ট্রেনটি। তার জেরেই ঘটে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
২ জুন ২০২৩। ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানাগা বাজার স্টেশনে পর পর তিনটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়ির মাথায় উঠে যায়। পাশের লাইন দিয়ে পাস করা বেঙ্গালুরু-হাওড়া হামসফর এক্সপ্রেসেরও একাধিক বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। তিনটি ট্রেনের প্রায় ১৫টি বগি রেললাইনের ধারে ছিটকে পড়ে। দুমড়ে-মুচড়ে যায় কামরাগুলি। মোট ২৯৩ জন যাত্রীর প্রাণহানি হয় এই ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায়। ১২০০-র বেশি যাত্রী আহত হন। এই ঘটনার তদন্ত করেছে সাউথ ইস্টার্ন সার্কেল কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি বা সিআরএস। তাদের তদন্তে জানা গিয়েছে, স্টেশনের উত্তর দিকের সিগন্যাল গুমটিতে সিগন্যালিং সার্কিট পরিবর্তনে ত্রুটি ছিল। আর সেই কারণেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, দুর্ঘটনার পরই তিন রেলকর্মীকে আটক করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এদের মধ্যে ছিলেন বাহানাগা বাজার স্টেশনের স্টেশন মাস্টার, একজন রেল টেকনিসিয়ান সহ আরও এক রেলকর্মী। তাদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে রেল দুর্ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। যদিও জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই জিজ্ঞাসাবাদের উপর ভিত্তি করে কয়েকদিন আগে রেলের তিন কর্মচারীকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তাঁরা হলেন, সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার অরুণ কুমার মহন্ত, সেকশন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আমির খান এবং টেকনিশিয়ান পাপ্পু কুমার। সিবিআইয়ের দাবি, তাঁদের কাজকর্মের জেরেই দুর্ঘটনা হয়েছিল। ওই তিনজনকেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ২০১ ধারায় তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের সিবিআই আদালতে পেশ করা হয়েছিল। বুধবার থেকে তাঁদের আরও চার দিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছে সিবিআই।