Satyajit Ray Birthday | জানা -অজানায় সত্যজিৎ রায়
কলকাতা: তাঁর হাত ধরেই ভারতীয় সিনেমার প্রেক্ষাপটের বদল ঘটেছে। কিংবদন্তী বাঙালি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) ১০৩তম জন্মজয়ন্তী (Birthday)। তিনি চলচ্চিত্র জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আপামর বাঙালির কাছে তো বটেই সিনে প্রেমীদের কাছে এই দিনটি উদযাপনের। সত্যজিৎ রায় ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সফল চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক এবং লেখক। সত্যজিৎ রায় ধরণীর মোড়ের হলুদ বাড়িটির বাইরে উৎসাহীদের ভিড়। কারণ বছরের এই বিশেষ দিনে রায় বাড়ির দরজা খুলে যায় সত্যজিৎ রায়ের অনুরাগীদের জন্য। এমন অনেক অজানা তথ্য আছে তাঁর সম্পর্কে, যা অনেকেরই অজানা। তাঁর কিছু অজানা দিক তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।
ভারতীয় সিনেমাকে বিশ্বের দরবারে মাইলসেটোন দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। ১৯৪৮ সালে নির্মিত ভিত্তোরিও ডি সিকা দ্বারা পরিচালিত ইতালিয়ান ছবি ‘দ্য বাই সাইকেল থিভস’ দেখে অনুপ্রাণিত হন সত্যজিৎ রায়। এরপরই পথের পাঁচালী (Pather Panchali) তৈরি করেন তিনি যা ভারতীয় সিনেমার প্রেক্ষাপটকে বদলে দেয়। তাঁর বানানো সিনেমা মোট ৩২টি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। এর মধ্যে ৬টি ছিল সেরা পরিচালকের পুরস্কার। এছাড়া ফরাসি সরকারের তরফে ১৯৮৭ সালে সেদেশের অন্যতম অসামরিক সম্মান ‘লিজিয়ঁন দ্য অনার’ দেওয়া হয় সত্যজিৎ রায়কে। সত্যজিৎ রায়কে সাম্মানিক ডক্টরেট দেয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। চার্লি চ্যাপলিনের পর দ্বিতীয় ফিল্ম ব্যক্তিত্ব হিসাবে এই সম্মান পান তিনি।
১৯৬২ সালে কাঞ্চনজঙ্ঘা সিনেমাটি তৈরি করেন সত্যজিৎ। ওটাই ছিল প্রথম রঙীন বাংলা ছবি। সত্যজিতের সিনেমার বেশ কিছু ডায়লগ তাঁর পিতা সুকুমার রায়ের থেকে অনুপ্রাণিত। যেমন সোনার কেল্লার সেই বিখ্যাত ট্রেনের দৃশ্য লালমোহনবাবু ফেলুদাকে বলবেন, “ছাতি ২৬, কোমর ২৬, গলা ২৬, আপনি কি মশায় শুয়োর?” এটা সুকুমার রায়ের (Sukumar Ray) হযবরল থেকে নেওয়া।
ছোটবেলায় কোঁকড়ানো চুল ছিল সত্যজিৎ রায়ের। স্টাইল করতে পারেননি। মা সিঁথি করে পাট করে চুল আঁচড়ে দিতেন। কিন্তু সত্যজিৎ যখন বড় হন, তখন ব্যাক ব্রাশ করে চুল আঁচড়ানো শুরু করেন। কিন্তু সুপ্রভা রায়ের সেটা পছন্দ হয়নি। তিনি রেগে গিয়ে বলতেন, ‘বখাটে ছেলেদের মতো দেখতে লাগে।’ কিন্তু জীবনে সেই প্রথমবার সত্যজিৎ মায়ের কথা শোনেননি।
‘চারুলতা’য় কিশোর কুমারকে দিয়ে ‘আমি চিনি গো চিনি’ গাইয়েছিলেন সত্যজিৎ। এই সম্মান পেয়ে কিশোর এতটাই উদ্বেলিত হয়েছিলেন যে, পারিশ্রমিক হিসেবে একটি পয়সাও নেননি।
ফেলুদা সিনেমার তৈরির সময়ে ফেলুদার ঘরে যামিনী রায়ের আঁকা একটি অরিজিনাল পেইন্টিং রাখার ইচ্ছে ছিল সত্যজিতের। কিন্তু পছন্দমতো না পাওয়ায় শেষে নিজেই আঁকতে শুরু করেন। আঁকা শেষে বোঝাই যায়নি কোনটি আসল আর কোনটি নকল!
সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় নারী চরিত্র গুলি জীবন্ত। আমার আপনার ঘরের মহিলাদের প্রতিচ্ছবি। তাঁর ছবি নারী চরিত্রদের অবদান অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই৷ কখনও মাধবী মুখোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন প্রতিটা চরিত্রগুলো আজও সকলের মণিকোঠায় উজ্জ্বল৷ সত্যজিৎ খুব পছন্দ করতেন মাধবী মুখোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন ও শর্মিলা ঠাকুরকে। তবে মাধবীকে তিনি সবচেয়ে বেশি তাঁর ছবিতে অভিনয় করিয়েছেন। তাঁদের বন্ধুত্বও ছিল জোরালো। মাধবীর বাড়িতেও ছিল তাঁর নিত্য যাতায়াত।
পরিচালক সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্রে আসার আগে সিগনেট প্রেসে বইয়ের কভার ইলাস্ট্রেশনের দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে ২ টি অসামান্য বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন করেন তিনি। তার মধ্যে একটি হল জিম করবেটের ম্যানইটারস অফ কুমায়ুন। আর অপরটি হল জওহরলাল নেহেরুর ডিসকভার অফ ইন্ডিয়া। ক্যালিগ্রাফিতে সত্যজিৎ রায়ের দক্ষতা সম্পর্কে অনেকেই অবগত।চারটি রোমান ফন্ট ডিজাইনের পিছনেও রয়েছে সত্যজিতের কৃতিত্ব। ভারতীয় মোটিফ ও ক্যালিগ্রাফি দিয়ে তৈরি সেই ফন্টগুলির নাম রে রোমান, রে বিজার, ড্যাফনিস ও হলিডে স্ক্রিপ্ট। ১৯৪৮ সালেই লেখা হয়ে গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস ‘ঘরে বাইরে’র চিত্রনাট্য। হরিসাধন দাশের সঙ্গে যৌথভাবে সিনেমাটি করার কথাও ছিল তাঁর। কিন্তু প্রযোজক চিত্রনাট্যের একজায়গায় পরিবর্তন করতে বলেন। তাতে সম্মত হননি সত্যজিৎ রায়। উল্লেখ্য, পথের পাঁচালিই সত্যজিৎ রায়ের প্রথম সিনেমা যা মুক্তি পাওয়ার আগে একটি টিজারের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। এটাই ছিল প্রথম ভারতে কোনও সিনেমা মুক্তির আগে তার টিজার প্রকাশিত হল। আর এদিক দিয়ে সবার থেকে সত্যজিৎ রায় আলাদা।