Placeholder canvas
কলকাতা বুধবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |
K:T:V Clock

শিল্প-স্বপ্নের ফেরিওয়ালা বুদ্ধদেব

Updated : 9 Aug, 2024 3:39 PM
AE: Krishnendu Ghosh
VO: Rachana Mandol
Edit: Silpika Chatterjee

এক সময় বিধানসভায় যাঁরা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে খুনি, রক্তপিপাসু বলে কটাক্ষ করেছেন, আজ মৃত্যুর পর সেই লোকটিকেই তাঁদের অনেকে বললেন, ভালো এবং সৎ মানুষটা চলে গেলেন। মনে পড়ছে, ২০০৬-২০০৭ সালের বিধানসভা অধিবেশনের দিনগুলি। তখনকার বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভায় ঢুকলেন। তাঁর গায়ে অ্যাপ্রনে ঝুলছে বুদ্ধবাবুর হাতে রক্ত লাগানো ছবি, তৃণমূলের কোনও কোনও সদস্যের হাতে শোভা পাচ্ছে প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা, বুদ্ধবাবু খুনি, আরও কত কী। ভাগ্যের কী পরিহাস। সেই প্রবল পরাক্রমশালী প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু শিক্ষা দুর্নীতির দায়ে জেল খাটছেন প্রায় দু’বছর ধরে। কিন্তু পার্থবাবুরা অনেক চেষ্টা করেও বুদ্ধবাবুর ধবধবে সাদা পাঞ্জাবিতে কালো দাগ লাগাতে পারেননি।

২০০০ সালে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বু্দ্ধবাবু বুঝতে পেরেছিলেন, রাজ্যে শিল্পের খুব প্রয়োজন। চাষির ছেলে আজকে আর চাষ করতে চায় না। সে বাপ-ঠাকুর্দার পেশায় থাকতে চায় না। সে চায় চাকরি। শিল্প না হলে চাকরি হবে কোথায়। তাই বুদ্ধবাবু স্লোগান তুলেছিলেন, কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত। তিনি বুঝেছিলেন বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের চাকরির সুযেোগ করে দিতে না পারলে তারা কোনওদিন বামপন্থীদের ক্ষমা করবে না। তাই তিনি তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উপর জোর দিয়েছিলেন। সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে শিল্পতালুক গড়ে উঠেছিল। শিল্পায়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই ২০০৬ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ষষ্ঠবারের জন্য ক্ষমতায় এসেই শিল্প গড়তে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। শপথগ্রহণের দিনই টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার রতন টাটাকে পাশে বসিয়ে সিঙ্গুরে তাদের ছোট গাড়ির কারখানা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন বুদ্ধবাবু। তখন কি তিনি ভেবেছিলেন, তাঁর সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে?

সেই বছরই বিরোধী তৃণমূল জোর করে তিনফসলি জমি কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করল। বেঁকে বসল বামফ্রন্টের বিভিন্ন শরিকদলও। বুদ্ধবাবু এবং তাঁর তখনকার শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের বিরুদ্ধে দলের অন্দরেও ক্ষোভ দেখা দিল। জমি অধিগ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন খোদ জ্যোতি বসু। প্রথম যেদিন জমি মাপতে গিয়ে সিঙ্গুরে সরকারি আধিকারিকরা বাধার মুখে পড়লেন, সেদিনই জ্যোতিবাবু বললেন, আমাদের হুগলির কমরেডরা কি ঘুমিয়েছিলেন। বিধানসভাতেই দম্ভভরে বুদ্ধবাবু বলেছিলেন, আমরা ২৩৫, ওরা ৩০। কে আমাদের রুখবে। টাটাদের যারা বাধা দেবে, তাদের মাথা ভেঙে দেব। তার পরের ইতিহাস তো সকলের জানা। তৃণমূল আন্দোলন, আইন-আদালত, মামলা-মোকদ্দমা সব চলল। তবু সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানার কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পুজোর মুখে রতন টাটাই কলকাতায় ঘোষণা করলেন, টাটারা কারখানা গুটিয়ে নিচ্ছে। কারখানা হবে গুজরাতের সানন্দে।