Sachin Pilot Update | কংগ্রেস ভেঙে নতুন দল গড়লেন না শচীন পাইলট, জল্পনা জলে
নয়াদিল্লি ও জয়পুর: বাবার মৃত্যুদিনে সাতসকালেই চমক শচীন পাইলটের। বাবা রাজেশ পাইলটের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ, রবিবার সকালে শচীন পাইলট টুইটে লিখেছেন, আমার বাবা জীবনে কখনও আপস করেননি। আর এই শব্দটি নিয়েই রাজনৈতিক আকাশে উড়ে বেড়াতে শুরু করে জল্পনার মেঘ। তাহলে কি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের সঙ্গে আপসের সম্ভাবনায় ইতি টানতে চলেছেন পাইলট-পুত্র? পূর্ব অনুমান মতো তাহলে কি এদিনই নতুন দল ঘোষণা করতে চলেছেন কংগ্রেসের তরুণ প্রজন্মের এই নেতা!
কিন্তু, শেষমেশ রাজস্থানের দৌসার ভূমিপুত্র বাবার লোকসভা নির্বাচনী কেন্দ্রে আয়োজিত এক স্মরণসভায় কংগ্রেসের গলায় আটকে থাকা দুশ্চিন্তার কাঁটা তুলে ফেলে কোনও দল গঠনের ঘোষণা শোনা গেল না শচীনের মুখে। বাবার স্মৃতিচারণের সময় তিনি বলেন, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য তাঁর লড়াই চলবে। বিশেষত রাজ্যের যুব ও তাঁদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন তিনি। দৌসার সমাবেশে পাইলট আরও বলেন, যুবকদের অধিকার ও তাঁদের ভবিষ্যতের জন্য আওয়াজ তুলেছিলাম আমি একা। সেই সময় নিজেকে একা বোধ করেছি। কিন্তু আপনারা আমার সঙ্গে ছিলেন।
পৃথক দলগঠনের সম্ভাবনা মোটামুটি স্থগিত রাখার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, সরকার পরিচালনায় কিছু ঘাটতি বা গাফিলতি যদি থাকে, তাহলে অন্যকে দোষারোপ না করে তা শুধরে নেওয়াই উচিত। কাউকে অপমান বা সম্মানহানির জন্য আমি দাবি তুলিনি। আপনাদের মত তুলে ধরেছি। রাজনীতিতে সেটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য বিধানসভার ভোটের মাত্র মাস ছয়েক আগে শচীন পাইলটের আজকের অবস্থানে নিঃসন্দেহে কংগ্রেস নেতৃত্ব হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। দেশের রাজনৈতিক পণ্ডিতদের সব জল্পনায় জল ঢেলে এদিন শচীন রাজনীতিতে স্বচ্ছতা আনার ডাক দিলেও কংগ্রেসের ‘হাত’ ছেড়ে দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত দেননি।
সকালে পাইলটের এক টুইটের পরে কংগ্রেস নেতৃত্ব পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে শুরু করে। যদিও তাঁর দলীয় নেতৃত্ব নতুন দল গঠনের সম্ভাবনা গতকাল, শনিবার পর্যন্ত উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু চমক ভাঙে আজ সকালের টুইটে।
শচীন লেখেন, আমার শ্রদ্ধেয় বাবা, শ্রীরাজেশ পাইলটের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি তাঁকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই। কাজের জগতে তাঁর আন্তরিকতা, আমজনতার সঙ্গে সম্পর্ক এবং জনকল্যাণে তাঁর মনপ্রাণ উৎসর্গিত কাজের ধারা আমার পাথেয়। তিনি জনতার স্বার্থকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছেন, কোনওদিন সে কাজে আদর্শের সঙ্গে আপস করেননি। আমি তাঁর চিন্তাধারা এবং আদর্শের পথ ধরে চলব, টুইটে লিখেছেন পাইলট।
ফলে এদিন নতুন করে জল্পনা তৈরি হয় যে, অবশেষে কি কংগ্রেসের ‘হাত’ ছাড়তে চললেন শচীন পাইলট? আগামী ১১ জুন বড়সড় ঘোষণা করতে চলেছেন পাইলট এমন কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা নতুন দল প্রতিষ্ঠা করবেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের সঙ্গে তাঁর আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এর জন্য নিজেরই দলের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলনও করেছেন শচীন। সম্প্রতি দিল্লিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন দুই নেতা। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব গোড়া থেকেই দাবি জানিয়ে আসছে, রাজস্থানে দল ঐক্যবদ্ধ আছে। এ বছরের শেষ নাগাদ হতে চলা বিধানসভা নির্বাচনে তারাই পুনর্নির্বাচিত হতে চলেছে। অশোক গেহলট সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপ না করার অভিযোগ রয়েছে পাইলটের। তা থেকে একচুলও সরে আসতে নারাজ তিনি।
প্রসঙ্গত, পাইলটের ক্ষোভ প্রশমিত করতে গত ২৯ মে রাজধানীতে দুই নেতাকে নিয়ে দীর্ঘ চারঘণ্টা বৈঠক করেন মল্লিকার্জুন খাড়্গে এবং রাহুল গান্ধী। তারপর শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়ে দেয়, রাজস্থান রাজনীতিতে কোনও বিরোধ নেই। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করবে। বিজেপিকে হারাতে সমস্ত মতভেদ দূর করে নির্বাচনের কাজে নামার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন খোদ রাহুল গান্ধী। কিন্তু, হাইকমান্ডের সঙ্গে বৈঠকের পরদিনই শচীন পাইলট জানিয়ে দেন তিনি তাঁর দাবি থেকে একচুলও নড়বেন না। পাইলটের দাবিগুলি হল, পূর্বতন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে হবে। রাজস্থান পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে যেসব যুবক-যুবতী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।