
CAG Report On IR | দুর্ঘটনার সতর্কতা দিয়ে সরকারের ঘরে কড়া নেড়েছিল ক্যাগ, শোনেনি কেন্দ্র
নয়াদিল্লি: একের পর এক ভয়াবহ ছবি। যন্ত্রণা, রক্তস্রোত, আর্ত চিৎকার ধুয়ে যাচ্ছে শত শত চোখের জলে। ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়ঙ্করতম দুর্ঘটনার পরেও রাজনীতির রেললাইন বেয়ে গড়গড়িয়ে চলছে নেতাদের বাণী ও চাপানউতোরের ডিব্বা। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের হিড়িক লেগে গিয়েছে যেন। কিন্তু, কেন ঘটল এই দুর্ঘটনা? কোনওভাবেই কি এড়ানো যেত না এই মৃত্যুমিছিল? নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে ঢাক-ঝাঁঝর বাজিয়ে উন্নয়নের রাংতা মোড়া উপঢৌকন দিতে ব্যস্ত, সেখানে সামান্য নজর দিলে কি এই দুর্ঘটনাকে রক্ষা করা যেত! ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অন্তত তাই বলেছে।
সতর্কবাণী ও ইঙ্গিতকে উপেক্ষা করতে পারে সরকার?
গতবছর ১ ডিসেম্বর অর্থাৎ মাত্র মাস ছয়েক আগে সংসদে এই রিপোর্ট জমা দেয় ক্যাগ। বিষয় ছিল ‘ডিরেলমেন্ট ইন ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ।’ যেখানে ২০১৭-১৮ এবং ২০২০-২১ সালের মধ্যে ১০টি ট্রেন দুর্ঘটনার মধ্যে ৭টিই ঘটেছে বেলাইন হওয়ার জন্য। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, লাইনে ত্রুটি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং রক্ষণাবেক্ষণগত ত্রুটি এবং অপারেটিং ত্রুটির জন্য ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, লাইন মেরামতি ও পরিবর্তনের জন্য অর্থ মঞ্জুর করা হয়নি। এছাড়া যতটুকু অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল তা পুরোপুরি খরচ করা হয়নি। ক্যাগের রিপোর্টে এও সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়েছিল যে, ২০১৭-২১ সাল পর্যন্ত ট্রেন বেলাইন হওয়ার ঘটনার ২৬ শতাংশই ঘটেছে নতুন লাইন না বসানোর কারণে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতীয় রেলের উচিত নিরাপত্তা ম্যানেজমেন্টের উপর জোর দেওয়া। নিয়মিত পরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যর্থতায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে পারে।
১১২৯টি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনার ২৩টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারণ দেখিয়েছে ক্যাগ। তার অধিকাংশই হল, লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, লাইনের উপর অত্যধিক চাপ এবং খারাপ কিংবা ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারার মতো দ্রুতগতিতে ট্রেন চালানো। ৩৯৫টি হল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যর্থতার কারণে। অপারেটিং ডিপার্টমেন্টের কারণে ২৬১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ত্রুটিতে ১৭১টি, সিগন্যালিংয়ের জন্য ২৭, ইলেকট্রিক্যালের জন্য ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। মানুষের ভুল অর্থাৎ চালকের গাফিলতিতে ঘটেছে ১৪৯টি দুর্ঘটনা।
নিরাপত্তার ঢক্কানিনাদ
২০১৭-১৮ সালে সরকার রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষা কোষ (RRSK) নামে একটি তহবিল গড়ে। যাতে বরাদ্দ করা হয় এক লক্ষ কোটি টাকা। এই টাকা পাঁচ বছরে জটিল এবং গুরুতর সুরক্ষাকাজে ব্যবহার করা হবে বলে ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর মধ্যে বার্ষিক ১৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় বাজেট বরাদ্দ থেকে। আর বাকি ৫ হাজার কোটি টাকা আসবে রেলের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। ক্যাগের অডিটে বলা হয়েছে, মোট বাজেট বরাদ্দের ১৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রেলের অভ্যন্তরীণ আয় থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থেকে যায়। অর্থাৎ স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, সুরক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান হয়নি।
ক্যাগের মন্তব্য, মোট ২০ হাজার কোটির ব্যয়প্রস্তাবের অর্থ জোগাড় না হওয়ায় আরআরএসকে যে কারণে গঠিত হয়েছিল, সেই সর্বোচ্চ রেল সুরক্ষার উদ্দেশ্য বাস্তবে পরিণত হতে পারেনি। ক্যাগের ব্যাখ্যায় উঠে এসেছে, আরআরএসকে-র তহবিল ঘাটতি ফলে তথাকথিত ‘প্রায়োরিট ওয়ান’ সুরক্ষার কথার কথাতেই থেকে গিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ এবং লেভেল ক্রসিং পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ যে গতিতে হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। তহবিলের অভাবে ২০১৭-১৮ সালের ৮১.৫৫ শতাংশ টাকার ঘাটতি ২০১৯-২০ সালে ৭৩.৭৬ শতাংশে নেমে এসেছিল। সে কারণে রেললাইন বদলে নতুন লাইন বসানোর কাজ হতে পারেনি। যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল, তাও কাজে লাগানো যায়নি।