Tourist Spot | গরমে নাজেহাল! স্বস্তি পেতে ঘুরে আসুন ‘গুরদুম
কলকাতা : কথায় বলে বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণপিপাসুরা নিত্যনতুন জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন। আর এখন অফবিট পর্যটন কেন্দ্রেরও অভাব নেই। বরং, এখন হাতের নাগালেই গড়ে উঠেছে নানা পর্যটন কেন্দ্র। দক্ষিণে বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু করে উত্তরের পাহাড়ি গ্রামগুলো হয়ে উঠেছে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। সেরকমই একটি জায়গা হল ‘গুরদুম’। মেঘের মধ্যে ভাসতে ভাসতে মনে হবে যেন স্বপ্নের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছেন কোনও অজানা রূপকথার দেশে। যেখানে চারিদিকে শুধু পাখির কোলাহল আর সামনে ছড়ানো মোলায়েম সবুজ পাইনের হাতছানি।
শ্রীখোলা যাওয়ার পথে পড়ে এই পাহাড়ি গ্রাম। সান্দাকফু থেকে ট্রেক করে নামার পথে অনেকেই রাত্রিযাপন করে এই গুরদুমে। প্রায় ৮ হাজার ফুট উচ্চতায় সিঙ্গোলিলা জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত এই গুরদুম। রডোডেনড্রন আর পাইনের জঙ্গলে ঘেরা গোটা গ্রাম। বসন্তে গেলে লাল রডোডেনড্রনের দেখাও মিলবে। তাছাড়া পাহাড়ি ফুল ও অর্কিড তো আছেই। তবে গুরদুমের সূর্যোদয় সবচেয়ে সুন্দর। ভোরবেলা পাখির ডাকে ঘুম ভাঙলে দেখতে পাবেন কীভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার রং বদলাচ্ছে সূর্যের কিরণে।
সূর্য ডুব দিলেই পাহাড়ে আর কোনও কিছু করার থাকে না। সূর্যের আলো থাকতে থাকতে গোটা গ্রামটি ঘুরে দেখে নিতে হবে। মাত্র ১৫টি পরিবার মিলে গড়ে উঠেছে গ্রামটি। শহুরের কোলাহল ও দূষণের চিহ্ন মাত্র নেই এখানে। এমনকী এই গ্রামের মানুষেরা প্লাস্টিক ব্যবহার করেন না। যে পাহাড় তাঁদের বাসস্থান, তাঁদের জীবিকার মাধ্যমে তাকে রক্ষা করে তাঁরা।
গ্রাম ঘোরা হয়ে গেলে এখানে যেতে পারেন মাজুয়া। পায়ে হেঁটে, ট্রেক করেও পৌঁছানো যায় মাজুয়া। এছাড়া গুরদুম থেকে ট্রেক করে নামতে পারেন চিত্রেতেও। আর যদি হাতে বেশি সময় নিয়ে যান, তাহলে ঘুরে দেখতে পারেন ধোত্রে, টুমলিং ইত্যাদি। মাজুয়া যাওয়ার পথে ঘুরে নিতে পারেন থ্রি সিস্টার জলপ্রপাত, দুমবার খোলা জলপ্রপাত এবং সানত্রে জলপ্রপাত। এগুলোই শোভা বাড়িয়ে তুলেছে এই অঞ্চলে।
মানেভঞ্জন থেকে একটি রাস্তা চলে যায় চিত্রে, মেঘমার দিকে। আরেকটি রাস্তা যায় মাজুয়ার দিকে। গুরদুম যাওয়ার জন্য আপনাকে মাজুয়ার রাস্তা ধরতে হবে। মানেভঞ্জন থেকে গুরদুম মাত্র ১২ কিলোমিটারের পথ। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গুরদুম প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। আর যদি দার্জিলিং থেকে যান তাহলে এটি ৯৩ কিলমিটারের রাস্তা। সান্দাকফু ট্রেক করে অনেকেই গুরদুম আসেন। কিন্তু আপনি চাইলে সরাসরি মানেভঞ্জন থেকে গুরদুম পৌঁছে যেতে পারেন।
গুরদুম থেকে বেশ কয়েকটি হোমস্টে রয়েছে। এছাড়া গুরদুমে থাকতে পারেন তাঁবুতে। এই অভিজ্ঞতাও অ্যাডভেঞ্চারের চাইতে কম কিছু নয়। গুরদুমে ব্যাকপ্যাকার্স রয়েছে, সেখানেই আপনি এই যাবতীয় সুবিধা পেয়ে যাবেন। গুরদুম রাত্রিযাপন এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ে মাথাপিছু ১,৫০০ টাকা খরচ হতে পারে। আর গুরদুম যাওয়ার সেরা সময় গ্রীষ্মকাল, শীতকাল এবং বসন্তকাল। বর্ষায় এই পাহাড়ি গ্রাম এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।