Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ |
K:T:V Clock

HS & School Life | স্কুল জীবনের ‘মস্তি কি পাঠশালা’ উচ্চ মাধ্যমিকের পরই শেষ!

Updated : 25 May, 2023 2:11 PM
AE: Samrat Saha
VO: Priti Saha
Edit: Monojit Malakar

জলছবি, রংমশাল স্কুল ছুটির হজমিরা
রূপকথার পায়রাদের গল্প বল 
বন্ধু চল…

উচ্চ মাধ্যমিক মানেই স্কুল জীবনের মস্তি কি পাঠশালার ইতি! সেই চেনা মুখ, দুষ্টুমি, টিফিন খাওয়া আরও কতকিছু…কিন্তু রেজাল্ট বেরনোর পর, উচ্ছ্বাস যখন স্তিমিত হয়ে আসে তখন মন খারাপগুলো যেন সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে। কাল স্কুলে গিয়ে গল্প বলা এখন যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। আবার কবে দেখা হবের অপেক্ষা। না, এখন মুঠোফোন ছাড়া সবার সময় বের করে একসঙ্গে হওয়ার অপশন নেই।

উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট। আগের দিন থেকেই কিছুটা মন দুরু-দুরু। রাতে ঘুম হয়নি ঠিক মতো। ভোরের দিকে চোখটা লেগে গেলেও সকাল ১০টার আগে ঘুম না ভাঙা ছেলে-মেয়েগুলোর এদিন সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গিয়েছে। একটা ভয় রয়েছে যে। ফল বের হল। এক লহমায় যেন ভয় কেটে উচ্ছ্বাস! ভালো হয়েছে রেজাল্ট। বন্ধু-বান্ধবদের ফোন, পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের শুভেচ্ছাবার্তা আসতে থাকল। মার্কশিটটা আনতে স্কুলেও গেল সবাই। সবার মুখে তখন এক চিলতে হাসি। 

তখনও যেন একটা ঘোরের মধ্যে সবাই। কিন্তু তারপরেই যেন তাল কাটল। চারিদিকে যেন হঠাৎই বিষাদ গ্রাস করে নিল। কেমন যেন দুর্গাপুজোর দশমীর দিনের মতো। হবু কলেজ ছাত্র-ছাত্রীর রোম্যান্টিসিজমে ডুবে থাকা ছেলে-মেয়েগুলো বুঝতে পারল ফুরিয়ে যাওয়ার মানে। একটা নিশ্চিন্তের ছাতা উড়ে যেতে চলেছে। দীর্ঘ কতগুলি বছরের স্কুলজীবন ফুরোচ্ছে, ক্যারামের ঘুঁটির মতো সব বন্ধুরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে এদিক-ওদিক। আর দেখা হবে না সেই সব চেনা মুখগুলোর সঙ্গে, যাদের সঙ্গে প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা করে কাটত। ভাবতে ভাবতেই চোখ থেকে যেন বৃষ্টি নামল। মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠছিল একদম ছোটবেলার কথা। ক্লাস ফাইভে সেই মায়ের হাত ধরে প্রথমবার স্কুলটায় আসা। এরপর একটু বড় হতেই একা স্কুলে যাতায়াতের ছাড়পত্র। মনে পড়ছিল, প্রেয়ারের লাইনে চুপিচুপি কথা বলা থেকে শুরু করে, ক্লাসের মধ্যে বসে লুকিয়ে টিফিন খাওয়ার দিন, টিফিনের সময় বোতল দিয়ে ফুটবল খেলা বা বেঞ্চ বাজিয়ে গানের দিনগুলি। এরপর সেই চেনা মুখগুলো একে অপরের সঙ্গে আলিঙ্গন করতে থাকল। সাদা জামাটায় লেখা হল নানা বার্তা। ক্লাসের সবচেয়ে বদমায়েশ ছেলেটাও সেদিন ক্লাস টপারের সঙ্গে কোলাকুলি করল। 

টিচার্স রুমে ফের দল বেঁধে উঁকি, শেষ বারের জন্য। কিন্তু এবারে আর শাস্তি বা চোখ পাকিয়ে বকুনি জুটলো না। বরং রাগি স্যার বা ম্যাডামের মুখে হাসি। পা ছুঁয়ে প্রণাম করতেই বললেন, ‘ভাল থাকিস, অনেক বড় হ।’ গোটা স্কুলবাড়িটা যেন সেই সব পাশ করা উচ্চ মাধ্যমিকের ছেলেমেয়েগুলিকে বলছে, আলবিদা। যেই ছুটির ঘণ্টার জন্য এত বছর প্রতিটা দিন সকলে অপেক্ষা করে থাকত, এদিন সত্যিই যেন মনে হচ্ছে, না আরেকটু থাকি। তারপর বুকে পাথর রেখে শেষবারের মতো স্কুলগেটটা ছেড়ে বের হতে হল। ওই যে, কথায় বলে না…’ছাড়তে জানতে হয়’।

উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্টের দিনটা শুধু সাফল্য বা ব্যর্থতা মাপার পরিমাপক নয়, বরং জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। একটা আবেগের দিন। একটা গতে বাঁধা জীবন চলে যেতে বসেছে এই দিনটায়। জীবনের একটা অধ্যায় শেষ হচ্ছে। হ্যাঁ, এরপরও অনেকটা পথ হাঁটা বাকি। এরপর মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলে যাবে। অর্থ, ব্যস্ততা, সাফল্য আসবেই। কিন্তু এই দিনটা আর এই জীবনটা ফিরে আসবে না।