Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ |
K:T:V Clock

বারবার আদালতে মুখ পুড়ছে রাজ্য সরকারের

Updated : 2 Nov, 2023 4:39 PM
AE: Abhijit Roy
VO: Soumi Ghosh
Edit:

কলকাতা: সিঙ্গুরের জমি মামলায় (Singur Land Case) সালিশি আদালতে বড় ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার (West Bengal Govt)। সালিশি আদালত রায় দিয়েছে, জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমকে প্রায় ৭৬৬ কোটি টাকা দিতে হবে টাটা মোটরসকে (Tata Motors)। একইসঙ্গে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ১১ শতাংশ হারে সুদও গুণতে হবে শিল্প নিগমকে। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার আইনি পথে যাওয়ার কথা ভাবছে। সালিশি আদালতের এই রায়ের পরই আইন দফতরের ভূমিকা নিয়ে নবান্নের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। একের পর এক মামলায় রাজ্য সরকার কখনও হাইকোর্টে, কখনও সুপ্রিম কোর্টে হারছে। সব মিলিয়ে আইন দফতর প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, খোদ মুখ্যমন্ত্রী ওই দফতরের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঘনিষ্ঠ মহলে। তাঁর বক্তব্য, আইন দফতের ব্যর্থতার জন্যই বারবার আদালতে মুখ পুড়ছে সরকারের।

রাজ্যের একাধিক মামলায় ভিনরাজ্য থেকে নামকরা আইনজীবী আনতে হচ্ছে বড় অঙ্কের ফি দিয়ে। আইনজীবী মহলে প্রশ্ন উঠেছে, আইন দফতর শৈথিল্য দেখাচ্ছে বলেই কি আদালতে গিয়ে মুখ পোড়াতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে।

আইনজীবীরা একাধিক উদাহরণ তুলে ধরছেন এ ব্যাপারে। যেমন, পেগাসাস কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে খোদ মুখ্যমন্ত্রী কমিশন গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তাতে স্থগিতাদেশ দেয়। তা এখনও বহাল রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, সরকারি কর্মীদের ডিএ মামলায় স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে এবং হাইকোর্টে বারবার রাজ্য সরকারের পরাজয় হয়েছে। বর্তমানে সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন।

তৃতীয়ত, কেরালা স্টোরি চলচ্চিত্রে রাজ্যের নিষেধাজ্ঞায় সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

চতুর্থত, রামনবমীতে হিংসার তদন্তভার হাইকোর্ট এনআইএকে দিয়েছিল। তা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রাখে।

পঞ্চমত, সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচন কেন্দ্রিক একাধিক মামলায় হাইকোর্টের বিভিন্ন নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে গিয়ে ব্যর্থ হয় রাজ্য সরকার। তা ছাড়া হাইকোর্ট রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছে। এই নভেম্বরে কমিশনার রাজীব সিনহাকে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

ষষ্ঠত, ২০২১ সালে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় হাইকোর্ট জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল। সেই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য রাজ্যের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের অনুমতি এবং হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসে রাজ্য সরকার।

২০২৩ সালের এমবিবিএস মেধা তালিকার খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন সূত্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের পাশ দিয়ে মিছিল করার অনুমতি দেয় হাইকোর্ট রাজ্যের আর্জি খারিজ করে। ২০১৪ সালের টেট দুর্নীতি নিয়ে জনস্বার্থ মামলা খারিজ করতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের আবেদন খারিজ করে মামলা ফেরত পাঠায় হাইকোর্টে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এখনও সুপ্রিম কোর্টে কোনও স্থগিতাদেশ পায়নি রাজ্য সরকার।

এমনিতেই নানা দুর্নীতির অভিযোগ জেরবার রাজ্যের শাসকদল। আদালতের নির্দেশেই সেই সব অভিযোগের তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তার উপর একের পর এক মামলায় রাজ্য সরকার আদালতে হারছে। এর জন্য আইনজীবী মহল দুষছে আইন দফতরকেই। তাঁদের মতে, দফতরের সঙ্গে আইনজীবীদের সমন্বয়ের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। আদালতের কাছে ঠিক সময়ে ঠিক তথ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। মামলার বিষয়বস্তু অনুযায়ী বিষেশজ্ঞ আইনজীবী নির্বাচন করা হচ্ছে না। এসব কারণেই মুখ পুড়ছে সরকারের।

সম্প্রতি নিম্ন আদালতের এক বিচারকের বদলি নিয়ে বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ডাক পড়ে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের। তিনি সব কাজ ছেড়ে হাজির হন আদালতে। বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, তিনি অসুস্থ থাকার কারণে ওই বদলি কার্যকর করা যায়নি। দ্রুত তা কার্যকর করা হবে। আদালতের নির্দেশ ছিল, ৬ অক্টোবরের মধ্যে বদলি কার্যকর করতে হবে। সূত্রের খবর, এখনও সেই বদলির নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি।