প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেতা মনোজ মিত্র, পড়ে রইল বাঞ্ছারামের সাধের বাগান
চলে গেলেন বাঞ্ছারাম। সিনেমায় সাজানো বাগান ছেড়ে তাঁর মরে যাওয়ার কোনও ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু অমন বাগান দখল করার জন্য জমিদারের বাঞ্ছারামকে মারার কোনও চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। পরিচালক তপন সিনহার সেই জনপ্রিয় সিনেমা বাঞ্ছারামের বাগান-এর চরিত্রাভিনেতা মনোজ মিত্রের (Monoj Mitra) জীবনাবসান হল। বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
প্রবীণ এই অভিনেতার (Aritst) জন্ম বাংলাদেশের সাতক্ষীরায়। ছোটবেলা থেকেই তাঁর অভিনয়ের (Acting) শখ ছিল। দুর্গাপুজোর সময় বাড়ির উঠোনে যাত্রা করতেন। কিন্তু বাড়ির বড়রা তা পছন্দ করতেন না। দেশভাগের পর তাঁরা চলে আসেন বসিরহাটে। স্কটিশচার্চ কলেজে পড়তেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এম এ করেন।
তখন থেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি শুরু। পরবর্তীকালে নাটক লিখতে শুরু করেন। পরিচয় হয় বাদল সরকার, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত প্রমুখ নাট্যব্যক্তিত্বের সঙ্গে। বন্ধু এবং চলচ্চিত্র পরিচালক পার্থপ্রতিম চৌধুরী এবং মনোজ সুন্দরম নামে নাট্য গোষ্ঠী তৈরি করেন। সেই সুন্দরম বহু নাটক উপহার দিয়েছে বাংলার নাট্যমোদিদের। সুন্দরমের প্রযোজনায় অনেক নাটকই মনোজের লেখা। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি নাটক বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। পরে বিভাগীয় প্রধান হন।
সাজানো বাগান, চোখে আঙুল দাদা, কালবিহঙ্গ, পরবাস, অলকানন্দার পুত্রকন্যা, নরক গুলজার, চাকভাঙা মধু, রাজদর্শন, দেবী সর্পমস্তার মতো বহু নাটক লিখেছেন তিনি। সেগুলির সফল প্রযোজনা দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। মনোজ নিজেও ছিলেন তুখোড় অভিনেতা। সাজানো বাগান নাটকে তিনি বাঞ্ছারামের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। সেটি অবলম্বনেই তপন সিনহা বাঞ্ছারামের বাগান সিনেমা করেন। তাতেও বাঞ্ছারাম হন মনোজ মিত্র। নাটক ছাড়া বহু সিনেমাতেও তিনি অভিনয় করেছেন। নাটকের জন্য তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছেন।
বাম জমানায় মনোজ মিত্র নাট্য অ্যাকাডেমির সদস্য ছিলেন। কিন্তু নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর পর্বে তিনি সেই সদস্যপদ ছেড়ে দেন। তৃণমূল আমলে ফের তিনি নাট্য অ্যাকাডেমির সদস্য হন। তবে স্বাস্থ্যের কারণে ইস্তফা দেন। গত কয়েক বছরে তাঁকে অসুস্থতাজনিত কারণে কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারলেন না তিনি। যাত্রা করলেন দিকশূন্যপুরের দিকে।