Award Wapsi | সরকারি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করা চলবে না, দিতে হবে মুচলেকা
নয়াদিল্লি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাইট উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। প্রখ্যাত ফরাসি নাট্যকার-সাহিত্যিক-দার্শনিক জঁ-পল সার্ত্র নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ব্যক্তি স্বাধীনতার পুরোধা সার্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক খ্যাতির বিরোধী ছিলেন। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার সম্ভবত সেই স্বাধীনতাও দিতে চাইছে না। কাউকে সরকারি পুরস্কার, খেতাব, সম্মান, পদক নিতে হলে আগাম মুচলেকা দিয়ে জানাতে হবে যে, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করবেন না। এমনটাই সুপারিশ করল সংসদীয় কমিটি।
সংসদীয় কমিটির সুপারিশ, সরকারি পুরস্কার প্রাপকদের মুচলেকা দিতে হবে। যাতে তাঁরা কোনও কিছুর প্রতিবাদস্বরূপ পুরস্কার গ্রহণের পরে তা প্রত্যাখ্যান না করতে পারেন। সরকারের উচিত এই মর্মে তাঁদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতিপত্র নিয়ে নেওয়া। পরিবহণ, পর্যটন এবং সংস্কৃতি বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি এ বিষয়ে একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে। সেটা হল ২০১৫ সালে প্রখ্যাত লেখক নয়নতারা সেহগল সহ ৩৯ জন শিল্পী সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
তাঁদের অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার সমালোচনার মুখ বন্ধ করে দিতে চায়। সংখ্যালঘুদের এখানে নিশানা করা হয়। ধর্মীয় উত্তেজনায় মদত দেওয়া হয়। এছাড়া এমএম কালবুর্গির খুনের প্রতিবাদও করেন তাঁরা। কমিটি তার রিপোর্টে বলেছে, যাঁরা পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তারা কিন্তু অকাদেমির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি। সংস্থাকে অপমান করার পরেও তাঁরা অকাদেমির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সংসদীয় কমিটির প্রধান ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ভি বিজয়সাই রেড্ডিসহ ১০ জন রাজ্যসভা সদস্য এবং ৩১ জন লোকসভা সদস্যের মতে, পুরস্কার ফেরত দেওয়ার মতো অযাচিত ঘটনায় অন্য পুরস্কার প্রাপকদের অসম্মানিত করা হয়। শুধু তাই নয় পুরস্কারেরও সম্মান এবং মর্যাদাও ক্ষুণ্ণ হয়। কমিটির মতে, প্রত্যেকের নিজ নিজ রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতেই পারে। কিন্তু, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা যাতে ভবিষ্যতে সম্মানের অশ্রদ্ধা না করতে পারেন তার জন্য একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এখানে রাজনীতির কোনও জায়গা নেই। কমিটি আরও বলেছে, আমাদের সুপারিশ হল যখন পুরস্কার দেওয়া হবে, তখনই প্রাপকের মত গ্রহণ করতে হবে। যাতে তিনি রাজনৈতিক কারণে পরে আর তা প্রত্যাখ্যান না করতে পারেন। এটা দেশের পক্ষেও অসম্মানের। চূড়ান্ত তালিকা তৈরির আগে সকলের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান না করার মুচলেকা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে কমিটি। যদিও কমিটির এক সদস্য এই সুপারিশের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে প্রত্যেকের বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে। একইভাবে যে কোনও মাধ্যমে প্রতিবাদ করারও অধিকার রয়েছে ভারতবাসীর। পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করাও গণতান্ত্রিক অধিকার।