Placeholder canvas
কলকাতা শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫ |
K:T:V Clock

এক ‘ঋতুহীন’ যুগ…

Updated : 31 May, 2025 10:53 AM
AE: Arijit Ghosh
VO: Sanchari Chatterjee
Edit: Aiyushe Maity

‘মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর
মন খারাপের দিস্তা
মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়,
ব্যাকুল হলে তিস্তা…’

এই দিনটার কথা মনে পড়লেই মন খারাপ হয়ে যায়। আজ ১২ বছর, মানে এক যুগ হল সিনেমা জগৎ ঋতুহীন। ২০১৩ সালে ৩০ মে, ঠিক আজকের দিনেই মেঘের দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা তথা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ (Rituparno Ghosh)। আর এই নামটার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, তর্ক-বিতর্ক আরও কতকিছু। আসলে বাংলা সিনেমায় ঋতুপর্ণর বিচরণ একেবারে বীরের মতো। হঠাৎ একদিন আবির্ভাব ঘটল, ঠিক ততটাই হঠাৎ করে চলে গেলেন। অনেকটা, ওই যে বলে এক ঋতু আসে আর এক ঋতু যায়। কিন্তু এই ঋতু চলে গেলেও মনের মাঝে আষ্টেপৃষ্টে ঠিক এক চিলতে জায়গা নিয়ে সারাজীবন থেকে যাবে। তাই ঋতু আসে, ঋতু যায় – কিন্তু ঋতুপর্ণ রয়ে যান।

এই ঋতুপর্ণই তো নিজের ইচ্ছেতে রামধনু পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন ‘প্রান্তিক’ মানুষদের প্রতিনিধি হয়ে। বিশেষ করে আজকে দাঁড়িয়ে যখন নারী-পুরুষের তরজায় বাদ পড়ে না শিশুও, তখন মনে হয়, সত্যি এই নিয়ে আলোকপাত সেই কবেই করেছিলেন ঋতুপর্ণ।

‘অন্তরমহল’-এর কথা মনে পড়ে যায়। সালটা ১৯৯৪। ছক বাঁধা গত ভাঙলেন ঋতুপর্ণ। তৈরি হল ‘উনিশে এপ্রিল’। আর দ্বিতীয় ছবিতে জাতীয় পুরস্কার আনলেন পরিচালক। জীবনদর্শনে শেখালেন অনন্য হতে। চলচ্চিত্র তৈরির মুন্সিয়ানায় অনেকদিন পর বাংলা ছবিকে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বের দরবারে। ‘দ্য লাস্ট লিয়র’ সম্পর্কের অন্য সংজ্ঞা নিয়ে আসে। আর এই ছবিও সম্মানিত হয় জাতীয় পুরস্কারে।

শুরুটা ১৯৯২ সালে ‘হীরের আংটি’ দিয়ে হলেও ঋতুপর্ণ পরিচালিত দহন (Dahan), উৎসব (Utsab), তিতলি (Titli), চোখের বালি (Chokher Bali), রেনকোট (Raincoat), খেলা যেন মানুষের জীবনকে একটা অন্য ধারায় বইয়ে দিয়েছিল। বাঙালি তা কখনও ভুলবে না। কী করেই বা ভুলবে, চিত্রনাট্যগুলো যে বড়ই নিজের ছিল, তাই না?

তাঁর দু’দশকের কর্মজীবনে ১২টি জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারেও সম্মানিত হয়েছিলেন। আসলে নিজের সৃষ্টির ভাবনাকে বিজাতীয় করে ফেলেননি ঋতুপর্ণ। তিনি ছিলেন অস্বাভাবিক রকমের বাঙালিমনস্ক। তাঁর সৃষ্টির পরতে পরতে তা অনুভব করা যেত। রবীন্দ্রনাথ ছিল তাঁর প্রাণে। ঋতুপর্ণ বলেছিলেন, “রবীন্দ্রনাথ আমার দেখা শ্রেষ্ঠ নারী”। বহু ছবিতে গুরুদেবের ছাপ রয়েছে। ‘চোখের বালি’, ‘নৌকাডুবি’, ‘চিত্রাঙ্গদা’র মতো ছবিগুলো তো এককথায় রবীন্দ্র উদযাপন। ঠাকুরকে নিয়ে ডকুমেন্টারি ছবি করেছিলেন ঋতুপর্ণ। নাম ‘জীবনস্মৃতি’। ‘গানের ওপারে’ সিরিয়ালেও ছিল নতুন প্রজন্মের রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চার গল্প।

ঋতুপর্ণকে নিয়ে লিখতে বসলে তা আর শেষ হতে চায় না। মাত্র ১২ বছরের কর্মজীবনের ব্যাপ্তি এতটাই যে, কোন প্রসঙ্গ ছেড়ে কোন প্রসঙ্গ লিখব, সেটাই বুঝে উঠতে পারা যায় না। আসলে আজ তাঁর মৃত্যুর ১২ বছর পর একটা কথা অনায়াসেই বলা যেতে পারে, কিছু শূন্যস্থান বোধহয় সত্যি কখনও পূরণ হয় না!

ভালো থেকো ঋতুপর্ণ…