Tourist Spot | ভারত থেকে শ্রীলঙ্কা দেখা যায় এই জায়গা থেকে, জানেন?
কলকাতা: কথায় বলে রহস্যে মোড়া পৃথিবী। সত্যিই, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে গেলে নানা প্রশ্ন জাগতে পারে, সেই সব জায়গার সঙ্গে মিশে আছে নানা অলৌকিক কাহিনীও। যার কোনও ব্যাখ্যা বিজ্ঞানও দিতে পারেনি। তেমনই ভারতের কোণায় কোণায় লুকিয়ে রয়েছে বহু রহস্যজনক স্থান। সেরকমই একটি জায়গা হল ধনুশকোডি (Dhanushkodi)। ধনুশকোডি হল তামিলনাড়ুর (Tamilnadu) রামেশ্বরমে অবস্থিত একটি রহস্যময় ছোটো শহর। এই স্থানটিকে দেশের শেষপ্রান্তও লা হয়। আর সেই শহরের ধার ঘেঁষে যে রাস্তাটি চলে গিয়েছে সেটি হল আমাদের দেশের শেষ রাস্তা। এই রাস্তা থেকে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কাকে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়।
তামিলনাড়ু (Tamilnadu) রাজ্যের পাম্বন দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত শহর হল ধনুশকোডি। পাম্বনের দক্ষিণ-পূর্বে এবং শ্রীলঙ্কার তালাইমান্নার থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এই রহস্যময় শহর। রহস্যে ঘেরা এই শহরে পৌঁছোনো বেশ কঠিন। শহরের মূল ভূখণ্ডে যেতে গেলে পাম্বন বা রামেশ্বরম দ্বীপ অতিক্রম করতে হয়। পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার। ধনুশকোডি ভারতের শেষ ভূমি হিসেবে পরিচিত। এবং এখানকার একটি নির্দিষ্ট পথকে বলা হয় ভারতের শেষ পথ। এই রাস্তা থেকে শ্রীলঙ্কা দূরত্ব মাত্র ৩১ কিলোমিটার। তাই এখান থেকে শ্রীলঙ্কাকে স্পষ্ট দেখা যায়।
ধনুশকোডি হল ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে একমাত্র স্থল সীমানা, যা কিনা পাক প্রণালীর বালির টিলায় অবস্থিত। স্থলভাগে এটি মাত্র ৫০ গজ প্রসারিত। সেই কারণে এই স্থানকে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম স্থান বলা হয়। ধনুশকোডির বেশিরভাগ অংশ আজও নির্জন। জানলে অবাক হবেন যে, এই স্থানে আগে বাড়িঘর, হাসপাতাল, হোটেল-ডাক অফিস সবই ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সবকিছুকে শেষ করে দেয়।
১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে, রামেশ্বরমের এই শহরে এক প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়। এবং এই কারণে ধনুশকোডি শহরটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারান প্রায় ১,৮০০ জন। ১০০ জন বিশিষ্ট যাত্রীবাহী একটি ট্রেন ডুবে যায়। এরপর থেকেই এই শহরকে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করে সরকার। ফলে এই স্থান এখন একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবে এই দ্বীপে বর্তমানে প্রায় ৫০০ জন মৎস্যজীবী বসবাস করেন। দক্ষিণী নকশার ছোটো ছোটো বাড়িতে বাস করেন জেলে ও তাঁদের পরিবারের লোকজন।
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই ধনুশকোডি থেকেই শ্রীলঙ্কা যাওয়ার সেতু নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেলিন রাম। রামের নির্দেশে, কারিগর নলের তত্ত্বাবধানে রামসেতু নির্মাণ করে বানর সেনা। রামায়ণ অনুসারে, গভীর এই সমুদ্রে সেতু নির্মাণ সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে প্রতিটি পাথরের গায়ে রাম নাম লিখে সমুদ্রে ছুঁড়ে দিলে সেই পাথর ভাসতে থাকে। এবং এভাবেই পাথরের ভাসমান সেতু নির্মাণ করে সেই পথ দিয়ে রাক্ষসরাজ রাবণের দেশে পৌঁছোন রাম-লক্ষ্মণ এবং তাঁদের বানর সেনা। ভারতের রামেশ্বরম দ্বীপের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মান্নার দ্বীপের সংযোগকারী এই সেতুটি ‘অ্যাডামস্ ব্রিজ’ নামেও পরিচিত। মহাকাব্য অনুসারে, সীতাকে উদ্ধারের পর রাম দেশে পৌঁছে তাঁর ধনুকের ডগা দিয়ে সেতুটি ধ্বংস করে দেন। সেই থেকেই এই শহরের নাম হয় ‘ধনুশকোডি’ যার অর্থ ‘ধনুকের সমাপ্তি’।
কীভাবে যাবেন ধনুশকোডি- ধনুশকোডির কাছাকাছি কোনও বিমানবন্দর নেই। নিকটতম বিমানবন্দর হল মাদুরাই। ধনুশকোডি থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৯৮ কিলোমিটার। বিমান বন্দর থেকে ধনুশকোডি পৌঁছোতে গেলে ক্যাব বা বাসে চেপে রামেশ্বরমে চলে যেতে পারেন। তারপর সেখান থেকে অন্য পরিবহনে ধনুশকোডি যাওয়া যায়। সড়কপথে ধনুশকোডি পৌঁছানো বেশ সহজ। রামেশ্বরম এবং অন্যান্য প্রধান এলাকা থেকে নিয়মিত বাস পাওয়া যায়। রামেশ্বরমে এসে ধনুশকোডি যাওয়ার বাসে যেতে পারেন। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল রামেশ্বরম। তামিলনাড়ুর প্রায় যে কোনও স্থান থেকেই ট্রেনে চেপে রামেশ্বরমে পৌঁছোনো যায়। স্টেশনটি ধনুশকোডির দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার।