Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ |
K:T:V Clock

Aajke | মাইনে বাড়ল বিধায়ক মন্ত্রীদের  

Updated : 9 Sep, 2023 2:42 PM
AE: Samrat Saha
VO: Indrani Banerjee
Edit: Subhadeep Banerjee

আমরা মানে হাফ গেরস্থ মানুষজন বাজারে যাই, এদিক ওদিক তাকিয়ে, ঘুরে সব থেকে সস্তার মাছ আর সবজি কিনে বাড়ি ফিরি। কিন্তু দেখেছি তারই মধ্যে গলায় মোটা সোনার চেন পরা, সাতসকালে ধপধপে পায়জামা পাঞ্জাবি পরে বাজারে আসা কিছু মানুষকে আগে জিনিস মানে ধরুন সবচেয়ে বড় ইলিশ মাছ কিংবা দু বিঘৎ সাইজের চিংড়ি মাছ কিংবা খাসির রান কিনে ব্যাগে পোরার পরে জিজ্ঞেস করতে, কত হল রে? তারপর ঝড়াৎ করে গোছা খানেক ৫০০ টাকার নোট বের করে দিয়ে দিতে। আমি দেখেছি ট্যাংরা মাছ কাটাতে গিয়ে যে কানকোর কাঁটাতে খানিক লেগে থাকা মাছসুদ্ধু পড়ে থাকে, ১০ টাকা দিয়ে এক মা-কে তাই কিনে নিয়ে যেতে। সেদিন তার ঘরে হয়তো বা ওই ট্যাংরা মাছ হবে। আমি দেখেছি মধ্যবিত্ত মানুষজনকে ওজন পত্তর করে ব্যাগে জিনিস ঢোকানোর পরে, দাম জানার পর আবার বের করে দিতে, সম্ভবত মানিব্যাগের সঙ্গে জিনিসের দাম মিলছে না বলেই। আমি দেখেছি দোকানির মুখে আর ধার দেব না শুনে খরিদ্দারকে ফেরত যেতে। আমি বাজারে হরেক কিসিমের, হরেক চেহারার, হরেক পেশার মানুষকে দেখেছি। অফ সিজনে ইলিশ কিংবা ফুলকপি কিনতে দেখেছি, হাত বুলিয়ে চলে যেতেও দেখেছি। শিক্ষক, প্রোমোটার, কেরানি, ডাক্তার, মুটে, রিকশা চালক, শিল্পী এমনকী অভিনেতাকেও দেখেছি স্পেনসার্সে বাজার করতে। আমি কখনও কোনও বিধায়ক, মন্ত্রীকে বাজারে দেখিনি, কোনওদিন কিচ্ছু কিনে খেতে দেখিনি। অনুষ্ঠানে দেখেছি, ইলিশ উৎসবে দেখেছি, পার্ক হোটেলের গেট টুগেদারে দেখেছি, আরও কত জায়গায় দেখেছি, কিন্তু তাদের পয়সা দিয়ে আলুর চপও কিনতে দেখিনি, ইলিশ কিংবা খাসির রান তো দূরের কথা। সেই মন্ত্রী, বিধায়কদের মাইনে বাড়ল, সেটাই বিষয় আজকে।

এক লপ্তে এই বাজারে হাজার ৪০ টাকা মাইনে বাড়া কি কম কথা? কিন্তু বেড়েছে। এই বিধায়কদের মধ্যে ৫০ শতাংশের সম্পত্তি ৮০-৯০ লক্ষ টাকা, ২০ শতাংশের সম্পত্তি ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা, ১০ শতাংশের সম্পত্তি ১০ কোটি টাকার উপরে। হ্যাঁ, ১০ শতাংশ এমনও আছেন যাঁদের সম্পত্তি ১৫-২০ লক্ষ টাকা। কিন্তু সেই তাঁদের সিংহভাগ নতুন বিধায়ক। বার দুই বিধায়ক হলে তাঁদের সম্পত্তিও বাড়বে। আমার দুর্ভাগ্য, আমি এঁদের কাউকেই কোনওদিন বাজারে গিয়ে টাকা দিয়ে কিছু কিনতে দেখিনি। কিন্তু আমি দেখিনি বলেই তো তা ধ্রুব সত্য হয়ে যাবে না। এমন তো হতেই পারে যে ওঁরা যখন বাজারে যান, তখন আমি বা আমাদের অনেকেই যান না, এমন তো হতেই পারে যে ওঁরা যে বাজারে যান, সেখানে আমরা যাই না। আফটার অল ওঁরাও রক্তমাংসের মানুষ, ওঁদেরও পরিবার, সন্তান আছে, তাদেরও খিদে পায়, কাজেই তাঁদেরও রোজগার করতে হয়, মাইনে বাড়লে সম্ভবত তাঁদেরও ভালো লাগে। 

কিন্তু অন্যদিকটাও ভাবুন, ওঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নেতা, যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা গত ছ’ বছর ধরে লাগাতার কমছে। হ্যাঁ, কনজিউমার ইনডেক্স সেই কথাই তো বলছে, বলছে দেশের মানুষের ৭০ শতাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। যাঁরা খাদ্যদ্রব্যের জন্য ১০০ টাকা ব্যয় করতেন গত বছরেও, তাঁরা এই বছরে ৮৯ টাকা ব্যয় করছেন, মানে ১১ টাকা সাধ্য কমেছে। কেন? টাকার দাম কমেছে, ওদিকে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে এবং মাইনে বাড়েনি। না, এটাই শুধু হিসেব নয়, ২০২০-২০২১ আর ২০২১-২০২২ এর হিসেবে ৩৭ শতাংশ মানুষের মাইনে কমেছে। চাকরি নেই, নতুন চাকরি হচ্ছে না, সে তো জানা কথা। বড় কথা হল চাকরি ছিল, তাদের চাকরি চলে গেছে, ওই বছরের হিসেবে ৭ শতাংশ মানুষের। আমি রাজ্যের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ ইত্যাদির কথা তুলবই না, কারণ তাঁরা মাসান্তে মাইনে তো পান। কিন্তু অসংগঠিত ক্ষেত্রে যেখানে শ্রমশক্তির ৭০-৭৫ শতাংশ মানুষ কাজ করেন, তাঁদের অবস্থাটা জানেন? ভেবে দেখেছেন? একজন কৃষকের, নরেন্দ্র মোদিজির মিথ্যে প্রতিশ্রুতি মতো রোজগার দ্বিগুণ হওয়ার কথা বাদই দিলাম, সত্যি করে তার আয় কমেছে। ফ্রি র‍্যাশন আর কিছু ডোল না পেলে এক্কেবারে খালি পেটে কাটাতে হত তাঁদের, তাঁদের কথা কে ভাববে? অথচ তাঁদের, সেই জনতা জনার্দনের বিকাশ আর উন্নয়নের দায় যাঁদের হাতে তাঁদের মাইনে এক লপ্তে বেড়ে গেল ৪০-৫০ হাজার টাকা? আমরা আমাদের দর্শকদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম, রাজ্যের দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেক বিধায়ক এবং মন্ত্রীর মাইনে বেড়েছে কমবেশি ৪০-৫০ হাজার টাকা, এ নিয়ে আপনারা কী বলবেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন। 

তথ্য বলছে সিঙ্গাপুরের একেকজন মন্ত্রী বা জনপ্রতিনিধি বিরাট টাকা মাইনে পান, বড় কর্পোরেট কর্তার মতো মাইনে পান। কিন্তু দুর্নীতির ধারেকাছে থাকলেও শাস্তি হবেই, এবং সেই ব্যবস্থা নিয়ে ওই ছোট্ট সিঙ্গাপুরের মানুষের আর্থিক সমৃদ্ধি দেখার মতো। দেশের মানুষের মাথা প্রতি আয় ৮৫ হাজার ডলারের মতো, ভারতের কত? ৭১৩০ ডলার। মাইনে বাড়ুক বিধায়কদের, মন্ত্রীদের, আমলাদের, রাজ কর্মচারীদের কিন্তু যাদের জন্য এই ব্যবস্থা সেই মানুষের আয় কবে বাড়বে? সেই মানুষ কবে গোটা ট্যাংরা মাছ কিনে বাড়ি ফিরবে? সেই মানুষ কবে নিশ্চিন্তে দু’ বেলা খাবারের স্বপ্ন কেবল দেখবে না, খাবার খাবে?