Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ |
K:T:V Clock

Rituparno Ghosh | ঋতু, তুই দশ বছর পরে এলে?

Updated : 31 May, 2023 9:05 PM
AE: Abhijit Roy
VO: Gautam Bhattacharya
Edit: Monojit Malakar

গৌতম ভট্টাচার্য: জন্মদিনে লোকে যেমন সুপ্রসন্ন মেজাজে ফোনে বার্থডে গ্রিটিংস গ্রহণ করে তেমন নয়। চরিত্রবিরোধীভাবে নিস্তেজ আর গম্ভীর লেগেছিল জগমোহন ডালমিয়ার গলা। আপনাকে এত চুপচাপ শোনাচ্ছে কেন জিজ্ঞেস করায় বললেন, “টিভি দেখছিলাম এতক্ষণ। ছেলেটা এভাবে চলে গেল?”

৩০ মে ,২০১৩।

কী আর বলব? বলা যেত মিস্টার ডালমিয়া আপনি টিভিতে যে লাইভ কভারেজ দেখছিলেন আমি সেই সদ্যমৃতের বাড়ি থেকে এখুনি বেরিয়ে আপনাকে ফোন করছি। কেন জানি না কিছু বলতে ইচ্ছে করেনি। শুধু বলি হু।

দশ বছর হয়ে গেল দেখতে দেখতে। সিস্টেমে হুবহু সেভ হয়ে গ্যাছে সেদিনের সকালটা। ঘুম ভেঙেছিল প্রযোজক পিয়া সেনগুপ্তর ফোনে। এখনও মনে করতে পারি পিয়ার উত্তেজিত এবং অবিশ্বাসী গলা, “আপনি জানেন কি না জানি না ঋতুপর্ণ মারা গ্যাছে। ঋতুপর্ণ!”

ঋতুর বাড়ি এতবার গিয়েছি। একতলা-দোতালার ঘরে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা হয়েছে। দোতালার সেই বেড রুমে কখনও যাইনি যেখানে ওকে শোয়ানো ছিল। মৃত্যু তো কতই দেখা। কিন্তু মৃতের এত প্রশান্তির সঙ্গে শুয়ে থাকা, যেন এখুনি ঘুম থেকে উঠবে, সেই প্রথম। আজও কেমন বিস্ময়কর লাগে এত নিয়মের মধ্যে থেকে, এত ওষুধপত্র খেয়ে কী করে এই জিনিস ঘটেছিল?

নাকি ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় গুঞ্জন যা বলে সেটাই ঠিক–তিনটে সার্জারি করিয়ে পুরুষ থেকে নারী হতে গিয়ে ঋতু জীবনটাকে খসিয়ে ফেলল? কত পারফর্মার তো প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে নাক-বুক-ঠোঁট-গাল ঠিক করে। কেন ঋতুর পোস্ট-সার্জারি জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে গেল? ভুল করে বেশি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেছিল সেদিন? মারাত্মক ডিপ্রেসন হয়েছিল সেই রাতে যা মাঝেমাঝে ওর হচ্ছিল?

উপযুক্ত ময়না তদন্ত কি হয়েছিল? নাকি এমন দ্রুততার সঙ্গে সব কিছু ঘটে যায় যে চিকিৎসকদের স্বাভাবিক অনুভূতিগুলো কাজ করেনি? নাকি সন্দেহের কিছু ছিল না? নন মেডিক্যাল পার্সন হিসেবে একটু বেশি ভাবছি? হয়েই থাকে।

কেউ জানে না আর হয়তো জানবেও না কোনটা সত্যি? ঋতুর চলে যাওয়া মহুয়া রায় চৌধুরীর অপঘাত মৃত্যুর মতো চিরকালীন অসমাপ্ত হেঁয়ালি হয়ে থেকে গেল। আর ওকে আরওই অমর করে দিল বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে।

কেন আজ পর্যন্ত ঋতুর জীবন নিয়ে সিনেমা তৈরি হয়নি? তার চেয়েও আশ্চর্যের এখনও যে কেউ ঋতুকে নিয়ে ওটিটি-র স্ক্রিপ্ট তৈরি করছে না? এত প্রতিভায় দীপ্যমান–এত স্ববিরোধী-এত সময় সময় ছোট মনের–এত সময় সময় উদাত্ত মেজাজের। এমন ককটেল আমি অন্তত নিজের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় কখনও দেখিনি। ওর শরীর-হরমোন-মানসিক মেজাজ কোনও একটা কি সময় সময় বিগড়ে যেত? নইলে হঠাৎ হঠাৎ ওর মনোভাব ৩৬০ ডিগ্রি বদলে যেত কেন?

ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচয় ছিল এবং ওর চলে যাওয়ার দশ বছর বাদেও অটুট থেকে গিয়েছে চারজন ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে। একজন যে বিখ্যাত ফিল্ম পরিচালক। একজন রোদ্দুরে ঝলমল করা সেলিব্রিটি যে দ্রুত ফিল্মের সীমানা ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছিল বাংলা সাংস্কৃতিক জগতের নক্ষত্র। একজন যে সম্পাদক এবং পরিস্থিতির নাটকীয় সব মোচড়ে বারবার হয়ে যেত প্রবল প্রতিপক্ষ। আর একজন ভালোবাসার মানুষ। সহপাঠী এবং ব্যক্তিগত জীবনের নিভৃতে ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

কিন্তু এই বৃত্তগুলো এত কাছাকাছি ছিল যে একটা সম্পর্ক বেড়া ডিঙিয়ে আর একটায় ঢুকে বন্ধুত্বের সবুজ ঘাস খেয়ে ফেলে দিত। বহুদিন চলত তেমন নির্দয়, ঘাসহীন, বালি আর কংক্রিটের চাপড়ার রাজত্ব। তার পর যেমন আচমকা ঘাসহীন হয়ে গেছিল বন্ধুত্বের দালান, সেটা আবার ঘাসে ভরে যেত। মনে হত কী অপূর্ব দেখাচ্ছে।

বাইরের সিনে পৃথিবী আমাদের চাপা যুদ্ধ আর টেনশনের খবরই বেশি জানত। দেখতো। সকালের ফোন কল বা বাড়িতে আসা-যাওয়া নয়। তাই ঋতুর শোকসভায় বক্তা হিসেবে নির্বাচিত একমাত্র সাংবাদিক হিসেবে আমাকে না বাছার যথেষ্ট কারণ ছিল। কেউ জানতও না দুই সহপাঠীর নিজস্ব একটা অমলিন পুঁচকে আকাশ রয়েছে। আর বাইরে যত অনিবার্য বিস্ফোরণ ঘটুক তারা সেটাকে কখনও বিপন্ন হতে দেয়নি।

সবে তখন কলকাতায় পেজার থেকে পৃথিবী মোবাইল ফোন সভ্যতায় স্থানান্তরিত হয়েছে। ঋতুর বাড়িতে যেতে গিয়ে ট্যাক্সিতে ফেলে আসি আমার জীবনের প্রথম মোবাইল। কমবয়েসীরা বুঝবেই না যে আজকের ওলা-উবের জমানা নয়, মূল্যবান কিছু পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ফেলে গেলে সেটা উদ্ধারের চান্স ছিল এক দশকে এক পার্সেন্ট। খুব আপসেট হয়ে ওর বাড়ি ঢুকেছি। জীবনে কখনও ভুলব না যে ঋতু দ্রুত একটা হ্যান্ডসেট বার করে দিয়ে বলল, “আমার স্পেয়ার আছে। তুই যতদিন না নতুন কিনছিস ,আমারটা ইউজ কর। মনে রাখিস আমার কোনও তাড়া নেই।” ‘চোখের বালি’-র ব্যস্ততম শুটিং শিডিউলের মধ্যে যেভাবে ও নায়িকাকে আমার সম্পর্কে অগাধ ফিট সার্টিফিকেট দিয়ে ঐশ্বর্যা রাইয়ের একঘন্টার বিশেষ ইন্টারভিউ করিয়ে দিয়েছিল। যেভাবে শর্মিলা ঠাকুরের সামনে স্পেশাল ইন্ট্রোডাকশন দিয়ে বসিয়ে দিয়েছিল। সেটা নিছক পেশাদার সম্পর্কে হয় না।

‘উনিশে এপ্রিল’ বেরোবার কিছুদিনের মধ্যে আমার বন্ধুপত্নী ফোন করল। তখন স্কুলের সিনিয়র টিচার ছিল এখন প্রিন্সিপাল। বলল,স্কুলের অ্যানুয়াল ফাংশনে ঋতুপর্ণকে যদি বলে দেওয়া যায়। প্রথম জাতীয় পুরস্কার ততদিনে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ঋতুপর্ণ তখনও ব্র্যান্ড ঋতুপর্ণ নয়। আদৌ বহু চর্চিত নয় ওর স্টাইল স্টেটমেন্ট। তা ইভেন্টের পর শুনলাম ঋতু নাকি দারুণ পাঞ্জাবি পরে গিয়েছিল। ধন্য়বাদসহ ফোন করার পর পাঞ্জাবি প্রসঙ্গে বলল, “রীনাদির অ্যাডভাইস। প্রথম দিন থেকে নিজের ড্রেস ঠিকঠাক রাখবি। একবার যদি নামিয়ে ফেলিস তখন খ্যাতি এলেও আর ওই জায়গাটা মেরামত হবে না।” খুব ইনোসেন্ট লেগেছিল শুনে। যেটা পরবর্তীকালে জনপ্রিয়তার স্রোতে ভেসে হারিয়ে ফেলেছিল ঋতু। তিক্ত ঘটনাগুলো লিখছি না। কিন্তু এক এক সময় সময় অবাক লাগত, এই নেটওয়ার্ক আছে এই নেই কেন এমন হচ্ছে?

শনিবারের ‘পত্রিকা’ সম্পাদনায় একটা ব্যাপার নিয়ে আমার খুঁতখুঁতুনি হচ্ছে। অন্য ফিচারগুলোর বহিরঙ্গ গতিশীল, প্রাণবন্ত করা গ্যাছে। কিন্তু ফিল্ম রিভিউয়ের লেআউট কেমন সনাতনী। লম্বা লম্বা লেখা বছরের পর বছর যাচ্ছে। একটা ফিল্ম সমালোচনার স্ট্রিপ নতুন যোগ করেছি। কিন্তু চোখের আরাম তাতেও হচ্ছে না। ঋতু সাজেস্ট করল,”একটা ইন্ট্রো করে দে হেডিংয়ের তলায়। দেখবি রিলিফ হবে।” আমি নিশ্চিত পারছি না। সেই ‘পথের পাঁচালি’-র সময় থেকে ‘দেশ’ পত্রিকা ও অন্যত্র ফিল্ম সমালোচনা ধীমান বাঙালির অভিজাত বৈঠকখানা। সেখানে নিছক চোখের রিলিফ করতে গিয়ে ইন্ট্রো অনুপ্রবেশ? বেখাপ্পা লাগবে না?

ঋতু হালকা বকল, “এই শোন গৌতম। তুই এমন করছিস যেন শালগ্রাম শিলা নাড়াচ্ছিস।” বকুনি এমন সাহস যোগালো যে চালু হয়ে গেল ইন্ট্রো এবং আজকের দিনে বেশির ভাগ বাংলা খবরের কাগজই দেখবেন ফিল্ম সমালোচনার আগে সংক্ষিপ্ত মুখবন্ধ ব্যবহার করে। কেউ জানে না তার নেপথ্যের রূপকার কে ? অনেক সময় কাছে থেকেও অনেক কিছু বোঝা যায় না। যতক্ষণ না সেই বিশেষ মুহূর্ত হাজির হচ্ছে। ওই এক লহমায় বুঝেছিলাম ঋতু নিমেষে কত ব্যতিক্রমী হতে পারে। ফর্ম ভাঙাভাঙির ঝুঁকি কত অবলীলায় নিতে পারে। ‘রোববার’ পত্রিকাটা কী দুর্দান্তই না তৈরি করেছিল যে ব্যতিক্রমী মশাল আজও বয়ে নিয়ে যাচ্ছে অনিন্দ্যর নেতৃত্বে ওর সাবেকি টিম।

একটা সময় মনে করা হত ঋতু হল একালের সত্যজিৎ। আমার সবাই সেভাবে ভেবেছি। যে তালিকায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কখনও পড়েননি। ওঁর ধারাবাহিক অনুলিখন করতে গিয়ে ঋতু নিয়ে খুব প্রশংসাসূচক আলোচনায় যতবার টানতে গেছি সৌমিত্র অনাগ্রহ দেখিয়েছেন। যদি খুব ভুলে না যাই তাঁর প্রথম দশজনের মেরিট লিস্ট ছিল মোটামুটি এইরকম; সত্যজিৎ এক থেকে তিন ,তপন সিংহ ,মৃনাল সেন, ঋত্বিক ঘটক,অজয় কর, অপর্ণা সেন, তরুণ মজুমদার, গৌতম ঘোষ। তালিকার ক্রমপর্যায় খুচখাচ নড়ে যেতে পারে। কিন্তু নামগুলো এই। শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুড়ির প্রশংসা করতে দেখেছি,”ওরা হলে লোক টানতে পারে।” ‘ময়ূরাক্ষি’-র শুটিং চলাকালীন অতনু ঘোষের কথা বলতেন। ‘অসুখ-‘এর ঋতুকে কিন্তু খুব একটা আলোচনায় আনতে দেখিনি।

একই সঙ্গে নিজের চোখে দেখা যে সাহারা কর্তা সুব্রত রায়ের ছেলের বিয়েতে গোটা টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি যেখানে হাজির, ঋতুকে দেখামাত্র অমিতাভ বচ্চন হুড়মুড়িয়ে এলেন। সানি দেওল আর ডিম্পল হাত নেড়ে ডাকলেন। সোহাগ সেন বলেছিলেন, বাংলা ছবির হলের বাইরে গাড়ির ভিড়টা ঋতু-ই আবার ফিরিয়ে এনেছিল। একদম ঠিক কথা যে নব্বই দশকের মাঝামাঝি যখন শহরবাসী বাঙালি মধ্যবিত্ত ফিল্ম থেকে মনোযোগ সম্পূর্ণ সরিয়ে সিরিয়ালে তাদের সংস্কৃতির নতুন ব্যালকনির ইন্টিরিয়র করছে। ঋতু আবার সেই সিনেদর্শকদের ঝাঁকটাকে পুরনো পৃথিবীতে ফেরত এনেছিল।

কিন্তু ওর আসল মস্তানি ছিল মুম্বইয়ের সেরাদের কলকাতায় নিজের টার্মসে টেনে আনা যে তুমি বচ্চন হও কী বিপাশা। দেবগন হও কী ঐশ্বর্যা। কলকাতায় আমার ডেরায় বসে আমার টিমের সঙ্গে কাজ করতে হবে।

কেন করতেন মুম্বই স্টাররা? সহজ উত্তর। ধোনি মানেই যেমন অবচেতনে ট্রফির লাইন। তেমনি চুম্বকের টান লুকিয়ে ছিল অন্ধ বিশ্বাসে যে ঋতু মানেই ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড। আমার কোটি কোটি টাকা ষ্টার হয়ে হয়তো পাচ্ছি। কিন্তু ঋতুর ছবি মানে নতুন জাতে উঠে যাব। মাস থেকে ক্লাসে।

কেরিয়ারের শেষ দিকটা ওর শীর্ষ অবস্থান সম্পর্কে কেমন নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল ঋতু। সৃজিত-কৌশিকদের ক্রমাগত সাফল্য আর নতুন ধারার কাজ ওকে প্রাণিত করা উচিত ছিল যে এতদিন পর মাঠে কিছু প্রতিযোগী দেখছি। এদের সঙ্গে লড়াইয়ের ঘর্ষণে নিজের কাজকে আরও ওপরের স্তরে নিয়ে যাই। এদের দেখাই যে প্রকৃত বাবা কে? সেটা একেবারেই ঘটেনি। বরঞ্চ ঋতুকে যেন নিজের জীবন, কাজ এবং ক্রাফ্টসম্যানশিপ নিয়ে এমন দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয় যে সেই সময় ওর কিছু কাজকর্ম বা মন্তব্যের সঙ্গে আমার কলেজ জীবন থেকে চেনা সেই শিল্পীকে মেলাতে পারি না যার কাছে জীবন ছিল দিগন্তপ্রসারিত ক্যানভাস। স্টক এক্সচেঞ্জ বা হাওড়া স্টেশনের নৈমিত্তিক গুতোগুতি নয়।

আজ মনে হয় পুরুষের শরীরে আটকে থাকা মহিলার যুগ্ম রাজপাট এবং চারপাশ থেকে সমাজের ক্রমাগত টিকাটিপ্পনি ওকে দিশেহারা ও সময়সময় বিভ্রান্ত করে ফেলেছিল। মুখে বলত কেয়ার করি না। কিন্তু এত সেনসিটিভ মন যার সে ক্রমান্বয়ে আঁচড়ে আক্রান্ত হবে না? রক্ত বেরোবে না তার। হয় নাকি? নিজের শরীর নিয়ে যার তুমুল উৎপাত নেই সে ছাড়া এতগুলো সার্জারি এত কম সময়ে কেউ করে?

দশ বছর আগের পৃথিবীও তো অন্যরকম। ফাস্ট ওয়ার্ল্ড বাদ দিচ্ছি। আজ সমকামীদের সম্পর্কে সচেতনতা তৃতীয় বিশ্বেও যথেষ্ট। এলজিপিটি আন্দোলন অন্য মাত্রায় পৌঁছচ্ছে। ঋতুকে তখনকার সমাজ নাগাড়ে যে চোখে দেখেছে, সেই দৃষ্টি হয়তো আজকালকার দিনে অনেক উন্নত হত। নিজেকে নিয়ে–নিজের শরীর নিয়ে কুন্ঠা এবং বিড়ম্বনা হয়তো এই মাত্রার থাকতো না।

অবাকই লাগে। ঊনিশের এপ্রিলের ওপেনিং সিকোয়েন্স ছিল মৃত্যু দৃশ্যে সবাই অবনমিত দাঁড়িয়ে। ওর নিজের জীবনেও তাই। সবাই যেন পুকুরঘেষা বাড়িটার সামনে অগুনতি দর্শকসহ ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে। এখুনি যেন ঋতু ডাকবে, স্টার্ট সাউন্ড ক্যামেরা, অ্যাকশন।

দশ বছরের মৃত্যুদিবসে বারবার মনে হচ্ছে এটাই কি তাহলে ওর নিয়তি ছিল যে ঝড়ের মতো আসবে? প্রথম ছবি থেকেই সাড়া ফেলে দেবে আবার ধূমকেতুর মতো মিলিয়ে যাবে? ঋতু নিজে কি হেডিং করত ‘রোববারে’? এক পরিচালকের নিহত ক্যানভাস? নাকি আনন্দের বিখ্যাত সংলাপে সান্ত্বনা খুঁজত–বাবুমশাই জিন্দেগি বড়ি হোনি চাহিয়ে লম্বি নেহি?

জানি না। ঋতু সম্ভবত একচিলতে হেসে বলত, এত চর্চায় যাস না গৌতম। তুই আমাকে নিজের মতো কুয়াশায় থাকতে দে না।