টেস্টে এই দুর্দশা কেন? কী বলছে টিম ইন্ডিয়ার ময়নাতদন্ত?
ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ, তারপর বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে (Border-Gavaskar Trophy) পরাজয়, লাল বলের ক্রিকেটে ছড়িয়ে ফেলছে ভারত (India)। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে (WTC Final 2025) এবার ওঠা হল না। অথচ কিউয়িদের ভারত সফরে আসার আগে রোহিত শর্মাদের (Rohit Sharma) ফাইনাল খেলা নিশ্চিত ছিল।
১৬ অক্টোবর থেকে ৫ জানুয়ারির মধ্যে আটটি টেস্ট খেলেছে ভারত, জিতেছে মাত্র একটা। একটা ড্র এবং ছ’টায় হার। ব্রিসবেন টেস্ট বৃষ্টির কারণে ড্র হয়েছিল, ওখানে ভারতের জেতার সম্ভাবনা ছিল না।
দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে ভারতের কেন এই হাঁড়ির হাল? রোগটা ঠিক কী? আসুন এ নিয়ে খানিক কাটাছেঁড়া করা যাক। আপনারাও জানাতে পারেন আপনাদের মতামত।
পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানের বিশুদা থেকে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ, সবাই একটা ব্যাপারে একমত। ভারতকে ডোবাচ্ছে ব্যাটিং। যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal) ছাড়া নিয়মিত রানের মধ্যে কেউ নেই। দুই সিনিয়র চরম ব্যর্থ, শুভমান গিল, কে এল রাহলের অবস্থাও তথৈবচ। ১০ বছর ধরে রাহুলের চুলের দৈর্ঘ্য যতটা বেড়েছে, রানের গড় ততটা বাড়েনি।
বার বার বিপর্যয়ে পড়েছে টপ অর্ডার, কখনও অলরাউন্ডাররা তো কখনও বোলাররা ম্যাচে ফিরিয়েছেন। যখন তা হয়নি ভারত হেরেছে। যেমন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ধসে গিয়েছিল টপ অর্ডার। অশ্বিন এবং জাদেজা ব্যাট হাতে উদ্ধার করেন, তারপর বোলাররা বাকি কাজ করেন। কিন্তু ম্যাচে ফেরার সুযোগ দেয়নি নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া।
কেন বারবার ব্যাটিং বিপর্যয়? টেস্ট দলে যাঁরা প্রথম এগারোয় থাকছেন তাঁরা প্রত্যেকে টি২০ ক্রিকেটের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে যুক্ত। বিরাট, রোহিত এবং জাদেজা অবসর নিয়েছেন তবে এখনও তাঁদের মধ্যে সাদা বলের খেলার রেশ কাটেনি। এক ফর্ম্যাট থেকে আর এক ফর্ম্যাটে মানিয়ে নেওয়া বোলারদের থেকে ব্যাটারদের কাছে বেশি চ্যালেঞ্জের। কারণ প্রতি বলে শট খেলার অভ্যেস দুম করে ত্যাগ করা কঠিন। অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ‘মাসল মেমোরি’।
এই রোগের ওষুধ আছে তা হল ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা। কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসেও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে ব্যাটিংয়ে শান দিয়েছিলেন স্বয়ং শচীন তেন্ডুলকরও। এখনকার ব্যাটারদেরও সুযোগ পেলেই রঞ্জি খেলা উচিত, কিন্তু তা তাঁরা খেলেন না। তাঁদেরও পুরোপুরি দোষ দেওয়া যায় না, সারা বছর এমন ঠাসা আন্তর্জাতিক ক্রীড়াসূচি থাকে।
একবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হতেই গৌতম গম্ভীরকে হেড কোচ পদে বসিয়ে দেওয়া কি সঠিক সিদ্ধান্ত? বিসিসিআই-এর শীর্ষ আধিকারিকরা কিন্তু এখন মাথা চুলকোচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্ট ফর্ম্যাটে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়ার আগে আরও একটু ভাবা উচিত ছিল। সাপোর্ট স্টাফ নিয়েও সমস্যা আছে। সুনীল গাভাসকর তো ব্যাটিং কোচ অভিষেক নায়ারের কড়া সমালোচনা করলেন এবং তিনি বিন্দুমাত্র ভুল বলেননি। থ্রো ডাউন দেওয়া ব্যাটিং কোচের কাজ নয়।
সামনেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি২০ ও ওডিআই সিরিজ। ঘরের মাঠে সিরিজ জিতলে আবার সবাই টেস্টের ব্যর্থতা ভুলে যাবে। তারপর তো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে মেতে ওঠা আছেই। তারপর মার্চ এপ্রিলে আসবে আইপিএল। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে কে ভাববে? ভাববে, আবার জুন মাসে। ইংল্যান্ডের মাটিতে পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলবে ভারত। এখনই সাবধান না হলে আবার একটা বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।