Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ |
K:T:V Clock

Aajke | কমরেড সেলিমের যুক্তি তক্কো আর গল্প

Updated : 12 Sep, 2023 2:31 PM
AE: Hasibul Molla
VO: Indrani Banerjee
Edit: Silpika Chatterjee

এমনিতে ইদানিং সিপিএম নেতাদের কথায় বার্তায় কাজে কম্মে ছিটেফোঁটা যুক্তি দেখা যাচ্ছে এরকম অপবাদ কেউ দিতে পারবেন না। তলার সারিতে তর্ক হয়? মমতার সমর্থকদের চটিচাটা বলা কিংবা মমতাকে চোরেদের রানি বলার জন্য তর্কের প্রয়োজন আছে নাকি? না তলা, না উপর, কোনও স্তরেই তর্ক নেই। সামান্য তার্কিক যারা তাদেরকে অবিলম্বেই চিহ্নিত করা হয় আঁতেল হিসেবে। তারপর বলা হয় পার্টির কর্মসূচি, মানে অমুক দিনে মিছিল, তমুক দিনে জমায়েত, তারপরের দিনে পোস্টারিং ইত্যাদিতে মন দিতে, সেখানে তর্কের অবকাশ কোথায়? কে প্রশ্ন করবে কমরেড সেলিমকে যে স্যর, এই ক’দিন আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আয়োজনে পঞ্চায়েত ভোটে না হয় বুথ দখল হয়েছিল, কিন্তু এই ধূপগুড়ির নির্বাচনে বুথ দখল তো ছেড়েই দিন, কোনও সামান্য গন্ডগোলও হয়নি। তাহলে প্রশ্ন ১) পঞ্চায়েত ভোটের থেকেও বেশি ভোট তৃণমূল পেল কীভাবে? ২) সিপিএম-এর ভোট সেই অর্থে কমে গেল কেন? এবার তো সার্বিক কংগ্রেস-সিপিএম জোটও হয়েছিল। এ নিয়ে তর্ক হবে? তর্কাতর্কি হবে? না হবে না, সিপিএম-এ সে পাট বহুদিন আগেই তুলে দেওয়া হয়েছে। তাহলে যুক্তি তর্ক আর গল্পের মধ্যে পড়ে রইল গল্প, হ্যাঁ, সিপিএম এখন নিখাদ গল্প। কখনও তেভাগা আন্দোলন, কাকদ্বীপ, ডোঙাজোড়ার গল্প, কখনও হারানের নাত জামাইয়ের গল্প, ট্রাম ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গল্প, শিক্ষকদের মাইনে বাড়ানোর দাবিতে লড়াইয়ের গল্প, খাদ্য আন্দোলনের গল্প, কলকাতার মিছিল নগরী হয়ে ওঠার গল্পের প্রতিটা স্তরে আপনি প্রথমে সিপিআই, তারপরে সিপিএম-এর গল্প পাবেন। তখন যুক্তিও ছিল, তর্ক ছিল প্রতিদিনের ব্যাপার, এখন সেই দুই ব্যক্তি, যুক্তি ও তর্ক কবরে শয়ান, পড়ে আছে গল্প, যা দিয়ে আর যাই হোক এই প্রজন্মকে কাছে আনতে পারবে না, কৃষক-মজুরকে কাছে আনতে পারবে না। কিন্তু কমরেড সেলিম সোশ্যাল মাধ্যমে সেটাই তাঁর আলোচনার শীর্ষক রেখেছেন, বিষয় আজকে সেটাই, কমরেড সেলিমের যুক্তি তক্কো আর গল্প। 

এই সোশ্যাল মাধ্যমে আলোচনা কেন? পার্টির চিঠি ইত্যাদি বড্ড পুরনো ব্যাপার, সামাজিক মাধ্যমে কমরেড সম্পাদককে প্রশ্ন করবেন পার্টি সদস্যরা, উনি উত্তর দেবেন, কারণ ওঁর কাছে তো সব উত্তর আছে। আমার মা সব জানে গোছের ব্যাপার। কী নিয়ে প্রশ্ন? মূল বিষয়টা হল ইন্ডিয়া জোট, সেখানে তৃণমূলও আছে, সিপিএমও আছে। ইয়েচুরি মমতার সহাস্য আলাপচারিতার ছবি আছে। ডি রাজা, সিপিআই সম্পাদকের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে ধরার ছবি মানুষ দেখছে। এদিকে বিমান বসু বলছেন, তৃণমূলকে পরাস্ত করে বিজেপিকে কোণঠাসা করুন। এ রাজ্যের পলিটিক্যাল বাইনারি, সে কমরেড সেলিম চান বা না চান দু’ দলের মধ্যে সেট হয়ে গিয়েছি। 

বিজেপি সরে গেলে সিপিএম-এর চান্স আসতেই পারে, কিন্তু সে কবে জানা নেই, আর মমতার দল সরে গেলে? ত্রিপুরাতে তো দেখলেন কমরেড বন্ধুরা, ভোটই করতে দেওয়া হয়নি। তো যাই হোক, প্রশ্নের জবাবে কমরেড সেলিম কী বলবেন তা জানা গেল গণশক্তির ৯ সেপ্টেম্বরের প্রথম পাতায়। হাসি নিয়ে কারও সমস্যা হলে এই বেলা কেটে পড়ুন। কারণ এরপর এক নির্মল হাসির খোরাক জোগাব আপনাদের। ৮ তারিখে গণনা শেষ, চা খেতে যাচ্ছি বলে বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ গণনাকেন্দ্র থেকে ঈশ্বর সেই যে বের হলেন, আর ফিরলেন না। পরের দিন মেহনতি মানুষের মুখপত্রে এ খবর তো থাকতেই হবে। আছেও, ছবিটা দেখুন। প্রথম পাতাতেই বলা হয়েছে ধূপগুড়ি জিতল তৃণমূল, পাশের কলামে লেখা আসলে জিতল আরএসএস। নিশ্চয়ই খবর আছে গণশক্তি বা কমরেড সেলিমের কাছে, লেখা হল, আসলে জিতছে আরএসএস-এর বিভাজনের রাজনীতি। সোজা করে পড়লে জিতল আরএসএস-এর রাজনীতি বা আরএসএস। বেশ, লিখতেই পারেন, কেউ এটা মনে করতে পারেন, তার সপক্ষে যে যুক্তি দেবেন, তা আমাদেরও কিছুটা জানা। কিন্তু না, এরপরে সেই মেহনতি মানুষের পত্রিকায় আরেকটু উপরের খবর, উপনির্বাচনে বড় ধাক্কা বিজেপির। এটা শীর্ষক, ভেতরে লেখা ইন্ডিয়া জোটের হাতে চারটে আসন, এনডিএ-র হাতে তিনটে আসন। বিজেপির হাতে থাকা ধূপগুড়ি আসন চলে গেছে তৃণমূলের কাছে আর সহানুভূতির হাওয়ায় জিতেছেন কংগ্রেসের চণ্ডী ওমেন। কেরালার কমরেড বিজয়ন এই আসনে ৫টা নির্বাচনী সভা এবং রোড শো করেছেন। ওমেন চণ্ডীর বিরুদ্ধে নারীঘটিত কেলেঙ্কারির ইস্যুও তোলা হয়েছে, তারপরেও এই পুথুপল্লি আসনে আজ পর্যন্ত রেকর্ড ভোটে হারলেন। আর ধূপগুড়িতে তো আসলে জিতল আরএসএস, কমরেড সেলিমের পার্টির মুখপত্রের প্রথম পাতায় সেই পার্টি একবার আরএসএস, একবার ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম মুখ। আমরা আমাদের দর্শকদের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, সিপিআইএম এবং তার দলের মুখপত্র গণশক্তি বলছে, লিখছে যে এই রাজ্যে ধূপগুড়ি আসনে জয় আসলে আরএসএস-এর, আসলে বিজেপির রাজনীতির, তারাই জিতেছে, আপনারা কি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত? 

টগর বোষ্টমীর গল্প আমরা জানি, টানা বিশ বছর সে নন্দ মিস্ত্রির সঙ্গে ঘর করছে, কিন্তু তার গর্ব একদিনের জন্যও সে মিস্ত্রিকে হেঁশেলে ঢুকতে দেয়নি। টগর বোষ্টমী বলে, “টগর বোষ্টমী মরে যাবে, তবু জাতধর্ম খোয়াবে না, তা জানো?” সেই টগর বোষ্টমী হল সিপিএম, ঘর করবে তৃণমূলের সঙ্গে, কিন্তু হেঁশেলে ঢুকতে দেবে না। তবে কোনওদিনই যে দেবে না তাও নয়, এই তো সেই কংগ্রেসের সঙ্গে এখন এক মঞ্চে অন্তত এই বাংলায়। সব ভালো কমরেড সেলিম, টগর বোষ্টমীপনা ভালো নয়।