Madan Mitra | Panchayat Election | বিনা ভোটে ৯৮ শতাংশ আসন পাবে তৃণমূল, হুমকি মদনের
কলকাতা: পঞ্চায়েত ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হতে না হতেই শুরু হয়ে গেল শাসকদলের নেতাদের হুঁশিয়ারি। শুক্রবার বেলঘরিয়ায় এক সভায় কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, এবারের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল ৯৮ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতবে। সব ঠিক থাকলে শুভেন্দু অধিকারী বাড়ির বাইরে পা ফেলতে পারবেন না। মদনের দাবি, পঞ্চায়েত ভোট হবে শান্তিপূর্ণ। একটা লাঠি, একটা বোমা, একটা গুলিও পড়বে না।
মদনের আরও মন্তব্য, মনোনয়নপত্র তোলার জন্য দশটি করে সিআরপি দিতে হবে হবে বিজেপিকে। বাংলায় কেউ নেই যে বুক ফুলিয়ে বলবে, আমি বিজেপির প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র তুলতে এসেছি। বিজেপির লোকজন সিপিএম, কংগ্রেসের হাত ধরে বাড়ির ভিতর গর্তে লুকিয়ে থাকবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কটাক্ষ করে মদন বলেন, তৃণমূল অফিসে খবর দিলে আমরা তাদের রাস্তা পরিষ্কার করে দেব। ভালো করে লুচি-মাংস খাওয়াব।
২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে তিনটি স্তরে ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন শাসকদলের প্রার্থীরা। রাজনৈতিক মহলে এটাই ছিল সব চাইতে বেশি চর্চার বিষয়। এই বিপুল সংখ্যক আসনে শাসকদলের প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের অর্থ হল সেবার প্রায় পাঁচ কোটি ভোটারের মধ্যে এক কোটি ৭৫ লক্ষ ভোটারই তাঁদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। গণতন্ত্রের পক্ষে এটা একটা চরম লজ্জার বিষয়।
২০১১ সালে পালা বদলের পর থেকে প্রায় সব নির্বাচনেই শাসকদল তৃণমূল জয়ী হয়েছে বিপুল ভাবে। কেবল ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি ১৯টি আসনে জয়ী হয়। তৃণমূল স্তরে যথেষ্ট উন্নয়ন করার পরেও কেন ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট বিরোধীশূন্য করার ডাক দিয়েছিল শাসকদল, তা আজও গবেষণার বিষয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও ১০০ শতাংশ আসনে জিততে হবে বলে দলীয় নেতাদের বার্তা দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, সে সময় পরিবহণমন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি তখন মমতার স্নেহের পাত্র ছিলেন। তিনি আবার এক ধাপ এগিয়ে যেসব পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য হবে, তাদের পাঁচ কোটি টাকা ইনাম দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন। ভাগ্যের কী পরিহাস। সেই শুভেন্দু এখন অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদিদের কোলের ছেলে বলে পরিচিত। বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত ভোটের দিন এবং অন্যান্য নির্ঘণ্ট প্রকাশ করার পর শুভেন্দু মন্তব্য করেন, বাংলায় আজ গণতন্ত্রকে হত্যা করা হল।
পঞ্চায়েত ভোটে বাম জমানাতেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের দৃষ্টান্ত রয়েছে। তবে তা ১১ শতাংশের বেশি হয়নি কখনও। ২০০৩ সালে বামেরা ১১ শতাংশ আসনে বিনা ভোটে জয়ী হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট রাজ্যের ক্ষমতায় আসে। পরের বছর প্রথম পঞ্চায়েত ভোট হয়। সেই ভোটে বামেরা ০.৭৩ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। ১৯৮৩ সালে (০.৭৪ শতাংশ), ১৯৮৮ সালে (৮.৯ শতাংশ), ১৯৯৩ সালে (২.৮১ শতাংশ), ১৯৯৮ সালে (১.৩৬ শতাংশ), ২০০৮ সালে ৫.৫৭ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে বামেরা। ২০১৩ সালে তৃণমূলের রাজত্বে প্রথম পঞ্চায়েত ভোটে তারা ১০.৬৬ শতাংশ আসনে বিনা ভোটে জেতে। আর ২০১৮ সালে সেই হার গিয়ে দাঁড়ায় ৩৪.৩৪ শতাংশে।
এবারও তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি না, তা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের নতুন নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা এই প্রশ্নের নিশ্চিত কোনও জবাব দেননি। ২০১৮ সালে প্রায় দুই কোটি ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি, সে প্রসঙ্গে কমিশনারের জবাব ছিল, অতীতে কী হয়েছে, এখন তা ভেবে লাভ নেই। কমিশনের উপর, রাজ্যের পুলিশের উপর ভরসা রাখুন।