মুখ্যমন্ত্রীর উৎসাহে পর্যটন কেন্দ্রের মান্যতা পাচ্ছে বৈষ্ণব তীর্থস্থান ‘কুলীন গ্রাম’
বর্ধমান: প্রতীক্ষার অবসান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) উৎসাহ দেখানোয় রাজ্যের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে মান্যতা পেতে চলেছে বৈষ্ণব তীর্থস্থান কুলীন গ্রাম।পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের আবুজহাটী ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একটি প্রাচীন জনপদ এটি। রবিবার রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ কুলীনগ্রামের বিভিন্ন মন্দির ও বৈষ্ণব মঠ ঘুরে দেখার পর সেই কথা ঘোষণা করেন তিনি। মন্ত্রীর এই ঘোষণায় খুশি কুলীনগ্রামের বাসিন্দারা।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িয়ে রয়েছে শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্যের রচয়িতা মালাধর বসুর নাম। শ্রীচৈতন্য দেবের আবির্ভাবের কিছু কাল আগে পূর্ব বর্ধমানের কুলীনগ্রামের ভূমিপুত্র মালাধর বসু এই কাব্য রচনা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে স্বয়ং শ্রীচৈতন্য দেব কুলীনগ্রামে এসে তিন দিন থাকেন বলে উল্লিখিত রয়েছে চৈতন্যমঙ্গল কাব্যে। তাই কুলীনগ্রাম শ্রীচৈতন্য দেবের পদধূলি ধন্য বৈষ্ণব তীর্থস্থান হিসাবেই দেশ জুড়ে পরিচিতি পেয়ে আসছে। এই কুলীনগ্রাম এবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিতে চলেছে।
পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে এই গ্রামেই মালাধর বসু জন্মগ্রহণ করেন। তার পৌত্র রমানন্দ বসু ছিলেন চৈতন্যদের খুবই অন্তরঙ্গ। বসু পরিবারের আমন্ত্রণেই চৈতন্যদেব কুলীনগ্রামে এসে ছিলেন।বসু পরিবারের কৃষ্ণ ভক্তি দেখে খুশি হয়ে চৈতন্যদেব পুরীর রথের জন্য কুলীনগ্রাম রেশমের পট্টডোরী পাঠানোর দায়িত্ব বসু পরিবারকে দেন। এই পট্টডোরী অর্থাৎ কাছি দিয়ে পুরির রথের সঙ্গে বাঁধা হত জগন্নাথ ,বলরাম ও সুভদ্রাকে । এমনকি ওই পট্টডোরী মালার মত করে এই তিন দেবতার গলায় পরানো হত। এখন যদিও এই প্রথা থমকে রয়েছে। তবে বহু কাল পূর্বে বসু পরিবার কুলীন গ্রামে যে রথরাত্রা উৎসবের সূচনা করেছিলেন সেই রথযাত্রা উৎসব পালনে কোন ছেদ পড়ে নি ।এলাকায় রয়েছে, রাজা বল্লাল সেনের আমলে তৈরি গোপাল মন্দির। গোলাল মন্দিরের সামনে রয়েছে একটি বড় জলাশয় যা গোপাল দিঘী নামে পরিচিত । এই দিঘীতে স্নান করা গঙ্গা স্নানের সমতুল্য বলে ভক্তরা মনে করেন। প্রতিবছর রথযাত্রা এবং জন্মাষ্টমী তিথিতে ভক্তের ঢল নামে কুলীন গ্রামে। ওই দিন মন্দির গুলিতে এই রাজ্য ছাড়াও দেশ ও বিদেশের বহু ভক্ত কুলীন গ্রামে সমবেত হন।
প্রসঙ্গত, বৈষ্ণব তীর্থস্থান কুলীন গ্রামকে পর্যটন স্থান হিসাবে মান্যতা দেওয়া হোক এই দাবি অনেকদিন ধরেই করে আসছেন এলাকাবাসী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্যগের ফলে, গ্রামীণ টুরিজম সেন্টার গড়তে কুলীন গ্রাম এবার রাজ্যের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হতে চলাতে আশায় বুক বেঁধেছেন এলাকার বিধায়ক থেকে সাধারণ মানুষ।