Aajke | অভিষেকের বন্ধু কারা?
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ২১ জুলাই কোথায়? শুনেছি তখন আধো আধো কথা বলতেন। নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরের সময় কোথায়? চোখে পড়েনি। পরিবর্তনপন্থী বিশিষ্টদের মুখ তখন মোড়ে মোড়ে লটকানো আছে, তিনি ছিলেন না। বহু পরে তাঁর আবির্ভাব, হ্যাঁ এরকম করেই বলা হয়। ২০১৪-তে তিনি ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ, সেবার ওই আসন জেতা খুব কঠিন কিছু ছিল না। তিনি ইংরিজি, খানিক হিন্দি ও বাংলায় অনায়াসে কথা বলতে পারেন, জানা গিয়েছিল। এরপর ২০১৫, কলকাতা কর্পোরেশন ইলেকশন কঠিন আসন, সচ্চিদানন্দ ব্যানার্জির এলাকা ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে অভিষেককে দেখেছেন আমাদের সিনিয়র জার্নালিস্ট দাদা। উনিই বললেন, খুব বলিয়ে কইয়ে নয়, কিন্তু স্মার্ট মনে হয়েছিল। খুব যে মিডিয়ার গুরুত্ব পাচ্ছিলেন তাও নয়, সঙ্গে ছিলেন ইন্দ্রনীল সেন, আমাদের ওই সিনিয়র জার্নালিস্ট দাদাকে বলেছিলেন, মার্ক হিম। বেশ, তার পরেই কি তিনি বিরাট কিছু হলেন? না হলেন না কারণ বিরোধী নেতা যত সহজে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে, শাসকদলের নেতারা তা পারে না তার উপরে দলের নাম তৃণমূল, নেত্রীর নাম মমতা। আর্কল্যাম্পের সব আলো ওখানেই জড়ো হয়। চলছিল, এইরকমই। এই করতে করতে চলে এল ২০১৯, লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বুয়া ভাতিজা, পিসি ভাইপোর কথা বলতে শুরু করলেন, অমিত শাহ থেকে যাবতীয় হেভিওয়েট বিজেপি নেতারা। অন্যদিকে বাম নেতাদের আক্রমণও ওই অভিষেকের দিকেই ছিল। ২০১৯-এ ভালো ধাক্কা খাওয়ার পর দল হাতে নিলেন মমতা, দায়িত্ব দিলেন অভিষেককে। দু’ নম্বরের পর এক নম্বরের আশায় যে চাষা বসেছিল, সেই শুভেন্দু কিন্তু সেই তখন থেকেই বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। ২০২১, দলের ভালো একটা অংশ বেরিয়ে যাচ্ছে শুধু নয়, তাদের আক্রমণ অভিষেকের দিকে। শুভেন্দু তো পিসি ভাইপো ছাড়া বক্তৃতাই দেননি, রাজনীতিতে হাফ প্যান্টুল প্রবীর ঘোষালও অভিষেককে নিয়ে বলছেন, এদিকে সাতে পাঁচে থাকি না রুদ্রনীলও। এই সময়ে সিপিএম নেতা গৌতম দেব লিপস অ্যান্ড বাউন্ডের তথ্য বের করে আক্রমণ করলেন অভিষেককে। রাজ্যের দুই বড় দলের তীব্র বিরোধিতাই জন্ম দিল এক নতুন নেতাকে। আজ সেটাই বিষয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বন্ধু কারা?
আধুনিক নয় সেই প্রাচীন যুদ্ধ পাঠের প্রথম পাঠ হল শত্রুকে আহত করার জন্য আক্রমণ কোরো না। তাতে শত্রুর শক্তি বাড়ে, পরাস্ত করার জন্য আক্রমণ করো। কিন্তু ২০২১ থেকে লাগাতার বিজেপি, সিপিএম-এর র্যাঙ্ক অ্যান্ড ফাইল, রাজ্য নেতা দিল্লির নেতা প্রত্যেকে রাজ্যে আসছেন, ভাষণের সিংহভাগ পিসি ভাইপো, কখনও শ্লেষ, কখনও চুটকি, কখনও দুর্নীতির অভিযোগ, কখনও জেলে পোরার কথা। সেই ২০২০ থেকে সিবিআই আসছে যাচ্ছে, ঘরে যাচ্ছে দফতরে ডাকছে, এবং যেভাবে ডাকছে তাতে বহু মানুষেরই মনে হতেই পারে এসব হ্যারাস করার জন্যই করা হচ্ছে। কেন? এরকম মনে হবে কেন?
প্রথম কথা বিজেপির সিবিআই কাদের দরজায় কড়া নাড়ছে, তা আজ সকলের জানা। আপনার পুলিশ যদি কিছু নির্দিষ্ট মানুষকেই টার্গেট করে, তাহলে আপনার উদ্দেশ্য লোকের কাছে স্পষ্ট হবে, হচ্ছেও। দেশ জুড়ে বিভিন্ন বিরোধী নেতা, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা থেকে শুভেন্দু অধিকারী থেকে মুকুল রায় থেকে শোভন চ্যাটার্জি থেকে অজিত পাওয়ার, প্রফুল্ল প্যাটেল, ছগন ভুজবল, কত শত নাম। এঁদের আর ইডি ডাকে না, সিবিআই ডাকে না। কাজেই এই ইডি বা সিবিআই যদি অভিষেককে গ্রেফতার করে, তাহলেও মানুষ ওই কথাটাই বলবে, সরকার বিরোধীদের মুখ বন্ধ করার চাপ দিচ্ছে। আবার অন্য দিকে দেখুন সিপিএম জানিয়েছে ইডি কেন গ্রেফতার করছে না অভিষেককে? সেই গ্রেফতারের দাবিতে তাঁরা ইডি আফিস ঘেরাও করবেন। এরাজ্যের রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যেটা তৃণমূল, মমতা, অভিষেক সেট করতে চান, সেটা কী? সেটা হল বিজেপি সিপিএম আসলে আমাদের বিরুদ্ধে। বিজেপি সিপিএম দুজনেই সেটাই প্রমাণ করছে। ফল? রাজ্যের গত আটটা উপনির্বাচনে আটটাতেই হেরেছে বিজেপি, একটায় কংগ্রেস, সেও তো হারিয়েছে। সে অবশ্য অন্য কথা। তাহলে দাঁড়াচ্ছেটা কী? একজন ৩৫ বছরের যুবকই বলা যায়, বিরাট রাজনৈতিক ইতিহাস নেই, লড়াইয়ের ইতিহাস নেই, কিন্তু মাটি পাচ্ছে বাংলার রাজনীতির, কেন? এক বিজেপি, দুই সিপিএম আর তিন নম্বর ওই ইডির জন্য। মমতা আনন্দিত তিনি এবং বিরোধীদের মাঝখানে একটা শক্তপোক্ত বাফার লাইন তিনি পেয়েছেন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, বিজেপির এই বারবার আক্রমণ, সিপিএম-এর জেলে পোরার দাবি, ইডির ঘনঘন ডাক পাঠানোই কি বাংলার রাজনীতিতে অনেকটা মাটি দিল না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
আজ ১৩ তারিখ ইন্ডিয়া জোটের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কমিটির বৈঠক। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম সদস্য, মিটিং আজ ডাকা হয়নি, দেশসুদ্ধু কাগজে এই দিনক্ষণ ছাপা হয়েছে, তার পরেও একজন রাজনৈতিক নেতাকে ইডি নির্দেশে বৈঠক ছেড়ে হাজিরা দিতে হবে এ কোন ধরনের শিষ্টতা? নাকি মোদিজির আমলে কাজ করছে শুধুই প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি? অভিষেক চোর? হতে পারে, নির্দোষ হতেই পারে, কিন্তু এই রাজনৈতিক ধূর্তামি দিয়ে আদতে অভিষেকের কোনও ক্ষতি হবে না, বরং তাঁর রাজনৈতিক উচ্চতা বাড়বে। মানুষ তত বোকা নয় যে মোদিজির প্রত্যেক কথাই সত্যি বলে মেনে নেবেন।